খুশকি মাথার ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেক মানুষের জন্য অত্যন্ত বিরক্তিকর হতে পারে। খুশকি হলে মাথায় প্রচণ্ড চুলকানি এবং চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি মূলত ম্যালেসেজিয়া নামক এক ধরণের ফাঙ্গাসের কারণে হয়। চলুন, খুশকি হওয়ার কারণ, প্রতিকার এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
খুশকি হওয়ার কারণ
খুশকি মূলত মাথার ত্বকের মৃত কোষের অতিরিক্ত পরিমাণে জমা হওয়ার ফল। নিচে খুশকি হওয়ার কিছু প্রধান কারণ তুলে ধরা হলো:
- শুষ্ক ত্বক
- শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতার অভাবের কারণে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। শুষ্ক ত্বকের কারণে খুশকির সমস্যা বেড়ে যায়। এছাড়া, ঠান্ডা ও গরম আবহাওয়ার অসামঞ্জস্যতা মাথার ত্বককে শুষ্ক করে তোলে।
- চুল যথেষ্ট পরিমাণে না আঁচড়ানো
- চুল কম আঁচড়ালে মাথার ত্বকের মরা কোষগুলো জমা হতে থাকে এবং খুশকি সৃষ্টি করে।
- অতিরিক্ত তেল ব্যবহার
- অতিরিক্ত তেল ব্যবহারের ফলে তেল চুলের গোড়ায় জমা হয়ে ফাঙ্গাসের প্রাদুর্ভাব ঘটায়, যা খুশকির কারণ হতে পারে।
- শ্বেত প্রদর জাতীয় অসুখ
- যাদের ঈস্ট জাতীয় অসুখ বা এলার্জির সমস্যা আছে, তাদের খুশকির প্রবণতা বেশি থাকে। মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
- পর্যাপ্ত শ্যাম্পু না করা
- নিয়মিত পর্যাপ্ত শ্যাম্পু না করলে মাথার ত্বক অপরিষ্কার থাকে এবং খুশকি হতে পারে।
- সঠিক খাদ্যাভাসের অভাব
- ভিটামিন বি এবং জিংক সমৃদ্ধ খাবার কম গ্রহণ করলে খুশকির ঝুঁকি বেড়ে যায়। অধিক চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলেও খুশকি হতে পারে।
- ম্যালেসেজিয়া ফাঙ্গাসের অতিরিক্ত বৃদ্ধি
- মাথার ত্বকে ম্যালেসেজিয়া ফাঙ্গাসের অতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে খুশকি হয়। এটি ত্বকের তেল শোষণ করে নেয়, যার ফলে অতিরিক্ত ত্বকীয় কোষ উৎপন্ন হয় এবং খুশকির সৃষ্টি করে।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ
- মানসিক চাপও খুশকির একটি অন্যতম কারণ।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে খুশকির প্রবণতা বাড়ে। বিশেষ কিছু রোগ যেমন- পারকিন্সন ডিজিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদির রোগীদের খুশকি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- পানির সমস্যা
- পানিতে ক্লোরিনের পরিমাণ বেশি হলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং খুশকি হতে পারে।
খুশকির চিকিৎসা
খুশকি দূর করার জন্য ম্যালেসেজিয়া ফাঙ্গাসের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। সাধারণত কিটোকোনাজল (Ketoconazole 2%) শ্যাম্পু ব্যবহার করা হয়।
- ব্যবহার বিধি:
- চুল ধুয়ে কিটোকোনাজল ২% শ্যাম্পু লাগিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে ২ বার করে ২-৪ সপ্তাহ ব্যবহারে খুশকি কমে যায়। যারা নিয়মিত খুশকির সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিরোধক হিসেবে প্রতি ১-২ সপ্তাহ পর পর এই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
খুশকি প্রতিরোধে করণীয়
- নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার
- নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করলে মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকে এবং খুশকি কম হয়।
- মাথায় স্কার্ফ ব্যবহার
- বাইরে গেলে ধুলোবালি মাথায় জমে খুশকির প্রাদুর্ভাব বাড়িয়ে তোলে। স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার করলে এই সমস্যা এড়ানো যায়।
- খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
- সুষম খাদ্যাভ্যাস খুশকি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি এবং ভিটামিন বি ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
- চুল পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখলে খুশকির সমস্যা কমে। তাই নিয়মিত চুল ধোয়া এবং পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি।
- ভেজা চুল দ্রুত শুকানো
- ভেজা অবস্থায় চুল বেঁধে রাখা উচিত নয়। গোসলের পর চুল ভালোভাবে মুছে নিয়ে দ্রুত শুকিয়ে নিতে হবে। হেয়ার ড্রায়ারের পরিবর্তে ফ্যানের বাতাসে চুল শুকানো ভালো।
আরও কিছু পরামর্শ
- অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার:
- খুশকি দূর করতে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি মাথার ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স ঠিক রাখে এবং ফাঙ্গাস বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
- লেবুর রস:
- লেবুর রস খুশকি দূর করতে সহায়ক। লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক এসিড ফাঙ্গাস নির্মূলে সাহায্য করে।
- টি ট্রি অয়েল:
- টি ট্রি অয়েলের অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাবলি রয়েছে, যা খুশকি দূর করতে কার্যকর।
খুশকির সমস্যা দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন, নইলে এটি চুল পড়ার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। খুশকি প্রতিরোধে শ্যাম্পু ব্যবহারের পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এভাবেই আপনি খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য নিয়মানুবর্তিতা বজায় রাখতে পারেন।