শিশুদের যখন কোনো কাজে উৎসাহিত করা হয়, তারা সেই কাজে আরও বেশি আগ্রহ ও মনোযোগ দিয়ে কাজ করে। অন্যদিকে, যদি তারা কোনো কাজে নেতিবাচক মন্তব্য পায়, তাহলে সেই কাজের প্রতি তাদের আগ্রহ কমে যায় এবং তারা সেই কাজ এড়িয়ে চলার প্রবণতা দেখায়।
নেতিবাচক মন্তব্যের কারণে অনেক সময় একটি শিশুর প্রতিভা গোপন থেকে যায়। প্রথমবার কোনো কিছু করতে গিয়ে তা নিখুঁত না হওয়াটা স্বাভাবিক। ক্রমাগত চর্চার মাধ্যমেই একজন মানুষ পারদর্শিতা অর্জন করে। কিন্তু একজন শিশু যখন নতুন কিছু করার চেষ্টা করে এবং তখন কেউ যদি বলে, “খারাপ হয়েছে”, “ভালো হয়নি”, “এটা কি করেছিস”, এবং হাসতে শুরু করে, তখন তার মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে সে আস্তে আস্তে সেই বিষয়টি এড়িয়ে চলতে শুরু করে।
উদাহরণ: গান গাওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক মন্তব্যের প্রভাব
ধরা যাক, একজন শিশু প্রথমবারের মতো গান গাওয়ার চেষ্টা করছে। তার প্র্যাকটিস না থাকায় বা কণ্ঠ যথেষ্ট সুন্দর না হওয়ায় গানটি খুব ভালো শোনাবে না। কিন্তু প্রথম দিনই যদি সে শোনে, “এহ! বন্ধ কর… যথেষ্ট হয়েছে… গানকে আর অপমান করিস না…” তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো সে আর গান গাওয়ার চেষ্টা করবে না। অথচ তার মধ্যে গান গাওয়ার প্রতিভা ছিল বা গান গাওয়া নিয়ে তার প্রবল ইচ্ছা ছিল। যদি তাকে সেই সময়ে বলা হতো, “দারুণ হচ্ছে, আরেকটু প্র্যাকটিস করলে আরও ভালো হবে” তাহলে সে প্র্যাকটিস চালিয়ে যেতো এবং একদিন সুন্দর করে গান গেয়ে আমাদের শোনাতে পারতো।
চেষ্টা ও প্রতিভার সম্পর্ক
অনেক ক্ষেত্রে কোনো কিছুতে প্রতিভা না থাকলেও পর্যাপ্ত চেষ্টার মাধ্যমে একজন মানুষ সফল হতে পারে। পাশের মানুষের উৎসাহিত করা তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসলে প্রতিভা বলতে কিছু আছে কি? অনেক বিখ্যাত মানুষই বিশ্বাস করেন যে, কোনো বিষয়ে লেগে থাকাই আসল প্রতিভা।
যখন আপনার পাশে কেউ নতুন কিছু শিখতে বা করতে যাচ্ছে, তখন তাকে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। যদি উৎসাহ না দিতে পারেন, তাহলে অন্তত নেতিবাচক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।
বাচ্চাদের প্রতিভা বিকাশে আমাদের দায়িত্ব
যাদের মধ্যে এখনো বাচ্চামি কাজ করে, যারা প্রতি পদক্ষেপে নেতিবাচক মন্তব্য শুনেন, ধরে নেওয়া যায় তারা ভালো কিছু করার চেষ্টা করছেন। মানুষ সাধারণত সেই বিষয়েই মন্তব্য করে যেটা অসাধারণ এবং তাদের সাধ্যের বাইরে। আপনি যদি এই বৃত্তের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারেন, তাহলে সেটা অনেক বড় অর্জন।
আমাদের দায়িত্ব হলো, শিশুর প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করা। তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া এবং নেতিবাচক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা। একটি শিশুর প্রতিভা বিকাশের জন্য পরিবারের সাপোর্ট এবং পাশের মানুষের উৎসাহ অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।
শিশুদের উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে
শিশুদের সবসময় উৎসাহিত করতে হবে। তাদেরকে বলতে হবে, “তুমি পারবে”, “তুমি আরও ভালো করবে”, “তোমার কাজটা দারুণ হয়েছে”। এই ধরনের মন্তব্য তাদের মনোবল বাড়াবে এবং তাদেরকে আরও পরিশ্রম করতে উদ্বুদ্ধ করবে। একটি শিশুর সফলতা তার নিজস্ব প্রচেষ্টা এবং পরিবেশের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল।
শিশুরা আমাদের ভবিষ্যত। তাদের প্রতিভা বিকাশে আমরা যদি সঠিকভাবে সহায়তা করতে পারি, তাহলে তারা ভবিষ্যতে সমাজের জন্য মূল্যবান সম্পদ হয়ে উঠবে। তাই আসুন, শিশুদেরকে সবসময় উৎসাহিত করি এবং তাদের প্রতিভা বিকাশে পাশে থাকি।
শুভ হোক তাদের পথ চলা।