লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে এমন একটি বিপজ্জনক ভাইরাস হল বি ভাইরাস। বি ভাইরাস জনিত সংক্রমণের কারণে লিভারে যে রোগ হয় তাকে নীরব ঘাতক হেপাটাইটিস বা হেপাটাইটিস-বি বলে। এ রোগ নিয়ে উদ্বেগের সবচে বড় কারণ হচ্ছে সারা বিশ্বে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে সংক্রমিত দশজনের মধ্যে নয়জনই জানেন না তারা এ ভাইরাস জনিত রোগে আক্রান্ত।
হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের ব্যপকতা কতটুকু?
আমাদের দেশের শতকরা ৪ ভাগ মানুষ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের বাহক। তাদের বিভিন্ন সময় জটিল লিভারের রোগ হচ্ছে। এ দেশের প্রায় ৩.৫% গর্ভবর্তী মায়েরা হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত। এই ভাইরাস তাদের নবজাতকের শরীরে সংক্রামিত হতে পারে। মনে রাখতে হবে যে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস, এইডস ভাইরাসের চেয়ে ১০০% বেশি সংক্রামক। সারা বিশ্বে প্রতি বছর এইডস (AIDS) রোগে যে পরিমাণ মানুষ মারা যায় তার চেয়ে বেসি লোক মারা যায় হেপাটাইটিস-বি (HBV) ভাইরাস সংক্রামনে।
কি ভাবে এই রোগের বিস্তার ঘটে ?
- রোগাক্রান্ত মা এর কাছ থেকে শিশুর।
- জন্মের পরে ভাইরসে আক্রান্ত মায়ের স্তন পানের মাধ্যমে।
- নিরীক্ষাবিহীন রক্ত গ্রহণ।
- ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশার দ্রব গ্রহণ করলে।
- আরক্ষিত যৌন ক্রিয়ার মাধ্যমে।
- অন্য জনের ব্যক্তিগত জিনিস ব্যবহার করলে, যেমন – ব্রাশ, রেজার।
- আক্রান্ত ব্যক্তিকে চুম্বনের মাধ্যমে।
- বিভিন্ন রকমের চিকিৎসার দূষিত যন্ত্রপাতির ব্যবহারের মাধ্যমে।
হেপাটাইটিস- বি কি কি ধরনের হয় ?
স্বল্পমেয়াদী হেপাটাইটিসঃ- এই রোগ সাধারণত কয়েক সপ্তাহ আথবা কয়েক মাসের মধ্যে ভাল হয়ে যায়।
দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিসঃ- এই ধরনের হেপাটাইটিস সাধারণত ৬ মাস থেকে আজীবন স্থায়ী হয়। দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সার এর অন্যতম প্রধান কারন।
হেপাটাইটিস- বি এর উপসর্গ সমূহঃ
আক্রান্ত রোগীর কোন উপসর্গ নাও থাকতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে জ্বর, ক্লান্তিবোধ, শরীর টনটন করা, ব্যাথা, বমি ভাব এবং ক্ষুধামন্দা হতে পারে।
কিভাবে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়ঃ
১/ ব্যক্তিগত পদক্ষেপ
- অন্যের ব্যক্তিগত দ্রবাদি ব্যবহার না করা।
- একবার ব্যবহার্য সিরিঞ্জ ও সূচ আবার ব্যবহার না করা।
- নিরাপদ রক্তসঞ্চালন।
- নিরাপদ যৌন চর্চা।
২/ টিকা গ্রহণের মাধ্যমে
নির্দিস্ট নিয়মে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে হেপাটাইটিস -বি প্রতিরোধ করা সম্ভব। মনে রাখবেন টিকা গ্রহণের আগে অবশ্যই রক্তে হেপাটাইটিস -বি আছে কিনা পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ। যদি হেপাটাইটিস -বি থাকে তবে টিকা নেয়া যাবেনা। টিকা নেয়ার নিয়ম ০, ১, ২ ও ১২। পরীক্ষা সহ টিকা নিতে ২০০০ হাজার থেকে ৩০০০ হাজার টাকা লাগতে পারে।
হেপাটাইটিস- বি (HBsAg Positive) পজেটিভ রোগীদের করনীয়
হেপাটাইটিস- বি পজেটিভ রোগীদের ঘাবড়াবার কিছু নেই। তবে জেনে নিতে হবে যে হেপাটাইটিস- বি ভাইরাসের কারনে লিভারের কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা অথবা সম্ভাবনা আছে কি না। এর জন্য কিছু পরীক্ষা করে নিতে হবে যেমনঃ- HBsAg, HBeAg, AST(SGOT), ALT(SGPT), HBV-DNA, Ultrasound এবং Endoscopy of upper GIT। এই সমস্ত পরীক্ষা করতে ৬০০০ হাজার থেকে ৮০০০ হাজার টাকা লাগতে পারে। এই সমস্ত পরীক্ষার ফলাফল ও রোগীর শারীরিক উপসর্গ বিবেচনা করে সঠিক চিকিৎসা নির্ধারন করতে হয়। অনেক সময় তাৎক্ষনিক চিকিৎসা আরম্ভ করতে হয়। অনেকে মনে করে যে হেপাটাইটিস- বি পজেটিভ রোগীদের আর নেগেটিভ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এটা ভুল। নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক সময় নেগেটিভ করা সম্ভব হয়। তবে চিকিৎসার খরচ একটু বেশি।
হেপাটাইটিস- বি জনিত লিভার সিরোসিস এর শেষ চিকিৎসা কি?
Liver Transplantation লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীর জীবন রক্ষাকারী পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অপারেশন করে কোন ব্যক্তির রোগাক্রান্ত লিভার অপসারণ করে সেই স্থানে দাতা ব্যক্তির সম্পুর্ন বা আংশিক সুস্থ লিভার প্রতিস্থাপন করা কে Liver Transplantation বলে। বর্তমানে বাংলাদেশে Liver Transplantation সম্ভব। এতে বাংলাদেশে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়।
নিজের কথা
আমি নিজে একজন হেপাটাইটিস বি এর বাহক। কিছুদিন আগের কথা আমি ছিলাম আমার ক্লাসের ফার্সট বয় সুন্দর মতো নিজের জিবন কাটাচ্ছিলাম আর দেয়ালিকার জন্য কাজ করছিলাম হেপাটাইটিস বি কিন্তু মাত্র ৩দিনের ওয়ারনিং এ আমি হয়ে গেলাম হেপাটাইটিস বি এর বাহক। আমি এখন বাসায়। ১সাপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম শুধু স্যালাইন চলেছে পানি খেলেও বমি হত। লিবার বিশেষগ্য এর পরমর্শে ঔষ সেবন করছি। এবার আপনি সিদ্ধান্ত নিন টিকা নিয়ে ৩০০০ হাজার টাকা খরচ করবেন নাকি Liver Transplantation করে ৩০ লাখ টাকা খরচ করবেন। আর যাদের হেপাটাইটিস- বি পজেটিভ তারা দেরি না করে লিভার বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন। আজি নিজের ও নিজের পরিবারের সদস্যদের টিকা দিন।আর যারা এ রোগে আক্রান্ত তাদের চিন্তা করার কিছু নেই শুধু বিশ্রাম নিন এবং প্রচুর পরিমানে ফল-মূল ও কাচা সালাদ এবং যতটুক পরিমানে পারুন তরল পানিয় পান করুন।