শীতকালে হাঁপানি রোগীদের জন্য প্রস্তুতি এবং পরামর্শ

শীতকাল হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীদের জন্য বিশেষভাবে কষ্টকর হতে পারে। শীতল ও ঠান্ডা আবহাওয়া, উড়ন্ত ধুলাবালু, শুষ্ক বাতাস, এবং ফুলের পরাগ রেণু রোগীর হাঁপানির সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। শীতে ভাইরাস সংক্রমণ, সর্দি, কাশি, এবং ফ্লুও বেশি হয়, যা হাঁপানি রোগীদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই শীত আসার আগেই হাঁপানি রোগীদের জন্য সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শীতকালে হাঁপানি রোগীদের জন্য প্রস্তুতির পরামর্শ

তাপমাত্রার তারতম্য:

শীতের শুরুতে আবহাওয়ার তাপমাত্রা দ্রুত ওঠানামা করে, যা অনেককেই অসুস্থ করে তোলে। তাই শীতের শুরুতেই সতর্ক থাকা জরুরি।

সকালের বা সন্ধ্যার হাঁটা:

যাঁরা ভোরে বা সন্ধ্যায় হাঁটতে বের হন, তাঁরা এ সময়টা পরিহার করুন। এ সময় তাপমাত্রার তারতম্য বেশি হয়, শিশির পড়ে, এবং কুয়াশা থাকে, যা ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা বাড়ায়। একটু বেলা করে হাঁটুন বা ঘরে ব্যায়াম করুন।

ধুলাবালু এবং পরাগ রেণু:

শীতকালে পরিবেশে ধুলাবালু ও উড়ন্ত ফুলের রেণু বেশি থাকে। বাইরে গেলে মাস্ক পরুন, যা উড়ন্ত ধুলাবালু থেকে রেহাই দেবে।

গরম কাপড় পরিধান:

যথোপযুক্ত গরম কাপড় ব্যবহার করুন। ঠান্ডায় বা সকালে বাইরে বের হওয়ার সময় মাফলার, টুপি, এবং মোজা পরুন। উলের কাপড়ে সমস্যা হলে, মোটা সুতি কাপড় এবং সুতি মোজা ব্যবহার করুন। বাড়িতে খালি পায়ে হাঁটবেন না।

ফ্লু এবং নিউমোনিয়ার টিকা:

শীতের শুরুতে হাঁপানি রোগীদের ফ্লু এবং নিউমোনিয়ার টিকা দিয়ে নেওয়া উচিত।

ইনহেলার এবং ওষুধের মজুত:

বাড়িতে ইনহেলার এবং অন্যান্য ওষুধের মজুত আছে কি না, মেয়াদ আছে কি না দেখে নিন। নেবুলাইজার ব্যবহার করলে সেটাও পরখ করে নিন। শীতের শুরুতে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ ও ইনহেলারের ডোজ ঠিক করে নিন।

কোভিড সচেতনতা:

কোভিড এখনো পুরোপুরি চলে যায়নি এবং নতুন ধরনগুলি ফিরে আসছে। শ্বাসতন্ত্রের রোগীরা উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন, তাই মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, এবং ভিড় এড়িয়ে চলার বিষয়ে জোর দিন। করোনা টিকা না নিয়ে থাকলে দ্রুত নিয়ে নিন।

শ্বাসকষ্ট হঠাৎ বাড়লে করণীয়

১. রোগীকে সোজা হয়ে বসতে বলুন এবং আশ্বস্ত করুন যে আতঙ্কের কিছু নেই। ২. উপশমকারী ইনহেলার ব্যবহার করুন। সালবিউটামল বা সালবিউটামল এবং ইপরাট্রোপিয়াম যুক্ত ইনহেলার স্পেসারের সাহায্যে ধীরে ধীরে পাঁচটি চাপ নিন। স্পেসার না থাকলে কাগজের ঠোঙা ব্যবহার করতে পারেন। ৩. স্পেসারের মধ্যে প্রতিবার এক চাপ দিয়ে তা থেকে পাঁচবার শ্বাস নিতে হবে। এভাবে পাঁচবার চাপ দিন। বয়স্ক এবং শিশুদের ক্ষেত্রে খেয়াল করুন, শ্বাস বড় করে ওষুধ ঠিকমতো টেনে নেওয়া হচ্ছে কি না। ৪. পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন। বিশ্রাম নিন। তারপরও শ্বাসকষ্ট না কমলে আবার পাঁচবার চাপ দিয়ে শ্বাস নিন। এভাবে মোট পাঁচবার (মোট ২৫ চাপ) নেওয়া যেতে পারে। ৫. এরপরও শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির টান না কমলে রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে বা নেবুলাইজার যন্ত্রের সাহায্য লাগবে। হাসপাতালে পৌঁছার আগ পর্যন্ত পাঁচ চাপ করে ইনহেলার নিতে থাকবেন।

জরুরি পরিস্থিতি

  • যদি রোগীর জিব, নখ বা আঙুল নীল হয়ে যায়।
  • শ্বাসকষ্টের জন্য কথা বলতে না পারে।
  • চেতনা হারিয়ে যেতে শুরু করে।

এ ধরনের ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়াই ভালো। অক্সিজেন এবং নেবুলাইজার ছাড়াও অন্যান্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

শীতকালে হাঁপানি রোগীদের জন্য সতর্কতা এবং প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হাঁপানির টান এবং শ্বাসকষ্ট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শীতকালে সুস্থ থাকুন, সাবধানে থাকুন।

Leave a Comment