মাংসপেশিতে টান পড়ার কারণ, লক্ষণ, ও প্রতিকার

মাংসপেশিতে টান পড়া বা শরীরের কোনো অংশ মচকানো একটি সাধারণ সমস্যা, যা মাসল পুল, মাসল সোরনেস, স্ট্রেইন, স্প্রেইন, ক্র্যাম্প, বা স্প্যাজম নামে পরিচিত। এই সমস্যার পেছনে থাকে বিভিন্ন কারণ এবং এটি নিরাময়ের জন্য রয়েছে নানা চিকিৎসা পদ্ধতি।

মাসল পুল কেন হয় এবং কারা বেশি আক্রান্ত হন?

মাংসপেশিতে অতিরিক্ত টান খেলে বা টিস্যু ছিঁড়ে গেলে মাংসপেশিতে টান পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ফিজিওথেরাপিস্ট ডা. রেজওয়ানা সুলতানা। এতে শরীরের ওই অংশটিতে ভীষণ ব্যথা হয় এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড নিঃসরণের জন্য জ্বালাপোড়া করে। এ কারণে মাংসপেশি নাড়াচাড়া করা যায় না।

মাসল পুলের প্রধান কারণসমূহ:

১. অতিরিক্ত ব্যবহার: শরীরের যেকোনো একটি মাংসপেশি অনেকক্ষণ ধরে ব্যবহৃত হলে। ২. ওয়ার্মআপের অভাব: ব্যায়াম, খেলাধুলা বা যেকোনো শারীরিক কসরতের আগে ওয়ার্মআপ না করলে। ৩. অকস্মাৎ নড়াচড়া: পেশী ক্লান্ত থাকা অবস্থায় আকস্মিক নড়াচড়া করলে। 4. ভারী বস্তু উত্তোলন: হঠাৎ অতিরিক্ত ভারী কিছু তুললে। 5. মানসিক চাপ: মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা। 6. খাদ্যাভ্যাস: পানি কম খেলে এবং শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব দেখা দিলে মাংসপেশিতে টান পড়তে পারে।

অ্যাথলেটরা এবং যারা দীর্ঘসময় ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন বা লম্বা সময় যানবাহন চালান, তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

মাসল পুলের লক্ষণ:

১. পেশীতে অতিরিক্ত ব্যথা। ২. আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটি ফুলে ওঠা বা লালচে দাগ পড়ে যাওয়া। ৩. আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে স্বাভাবিক ওজন নিতে কষ্ট হওয়া। ৪. মাংসপেশি শক্ত হয়ে পড়া।

মাসল পুল হলে কি করবেন:

রাইস থেরাপি:

১. রেস্ট (বিশ্রাম): সব ধরনের শারীরিক ব্যায়াম বা ক্রিয়াকলাপ বন্ধ রাখতে হবে। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে কোনো ওজন নেয়া যাবে না। 2. আইস (বরফ): আঘাতের স্থানে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিটের জন্য বরফের ব্যাগ দিয়ে রাখুন। 3. কমপ্রেশন (সংকোচন): আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটি নাড়াচাড়া নিয়ন্ত্রণে একটি ব্যান্ডেজ দিয়ে মুড়িয়ে রাখুন। 4. এলিভেট (উঁচু করা): আঘাতের স্থানটি যতটা সম্ভব বালিশের উপর উঠিয়ে রাখুন।

চিকিৎসা পদ্ধতি:

মাংসপেশিতে টান পড়লে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। বিশেষ করে অতিরিক্ত ব্যথা হলে, ব্যথায় জ্বর উঠলে, কয়েকদিন পরও ব্যথা না কমলে, মাংসপেশির ফুলে ওঠা না কমলে বা বাড়লে, শ্বাস নিতে কষ্ট হলে, মাথা ঘুরলে, শরীর দুর্বল হলে বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে দেরি করা যাবে না।

প্রাথমিক চিকিৎসা:
  1. এনেস্থেটিক ক্রিম বা স্প্রে: তাৎক্ষণিক ব্যথা কমানোর জন্য।
  2. ব্যথানাশক ওষুধ: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
পরীক্ষানিরীক্ষা:
  1. রক্ত পরীক্ষা: শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য পরীক্ষা করা হয়।
  2. আলট্রাসাউন্ড ইমেজিং: পেশী, রগ, লিগামেন্ট, স্নায়ু এবং জয়েন্টগুলির ছবি ধারণ করে।
অন্যান্য চিকিৎসা:
  1. বিশেষ ব্যান্ডেজ: আক্রান্ত স্থান বিশেষভাবে ব্যান্ডেজ করা।
  2. ক্রাচ: চলাচলের জন্য।
  3. ফিজিওথেরাপি: দ্রুত সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

মাসল পুল এড়াতে করণীয়:

  1. ওয়ার্মআপ: যেকোনো শারীরিক কসরতের আগে ওয়ার্মআপ করতে হবে।
  2. নিয়মিত ব্যায়াম: শরীর সুস্থ রাখতে।
  3. বিরতিতে কাজ: দীর্ঘক্ষণ বসে না থেকে মাঝেমধ্যে পায়চারি করতে হবে।
  4. প্রচুর পানি পান: শরীরের পানি শূন্যতা এড়াতে।

মাংসপেশিতে টান পড়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর সঠিক প্রতিকার ও পরিচর্যা না নিলে এটি গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। তাই সময়মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment