কোলন ক্যান্সার: লক্ষণ ও চিকিৎসা

কোলন ক্যান্সার বর্তমান সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে এটি নির্ণয় করা কঠিন, তবে সঠিক চিকিৎসা ও প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণের মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই নিবন্ধে কোলন ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, যার মধ্যে লক্ষণ, কারণ, রোগ নির্ণয়, এবং চিকিৎসা পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি

প্রাথমিকভাবে জানা দরকার যে, কোলন ক্যান্সার সাধারণত পুরুষ এবং কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ৫০ বছর বয়স পেরুলে এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যদিও সাম্প্রতিককালে অল্প বয়সীদের মধ্যেও এই রোগের প্রবণতা বাড়ছে।

ঝুঁকি বৃদ্ধির কারণসমূহ

কোলন ক্যান্সার হওয়ার কারণের মধ্যে পরিবেশগত এবং জিনগত কারণ অন্যতম। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যাভ্যাস এই রোগের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যেমন অতিরিক্ত লাল মাংস (গরু বা ছাগলের মাংস) খাওয়া, খাদ্যতালিকায় আঁশযুক্ত খাবারের অভাব, ধূমপান ও মদ্যপান এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

স্থুলকায় ব্যক্তিরা এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। অন্যদিকে নিয়মিত ব্যায়াম, বিশেষত পুরুষদের ক্ষেত্রে, কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। পরিবারে কোলন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়ে যায়, বিশেষ করে যদি মা, বাবা, ভাই বা বোনের মধ্যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগীরাও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন।

লক্ষণসমূহ

প্রাথমিক পর্যায়ে কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ চিহ্নিত করা খুবই কঠিন, কারণ প্রথমদিকে এটি তেমন কোনো স্পষ্ট উপসর্গ প্রকাশ করে না। কোলন বা মলাশয়ের বিভিন্ন স্থানে ক্যান্সার হওয়ার ফলে উপসর্গের ভিন্নতা দেখা যায়।

প্রাথমিক লক্ষণ
  • পায়খানার সাথে রক্তপাত
  • পেটে ব্যথা
  • মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন (ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য)
  • রক্তশূন্যতা (দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট)
গুরুতর অবস্থার লক্ষণ
  • অতিরিক্ত ওজন হ্রাস
  • পেটে চাকা
  • পেটে পানি জমা
  • কাশির সাথে রক্তপাত

অনেক সময় রোগটি অতিমাত্রায় অগ্রসর হওয়ার পর রোগীরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই পূর্বে অপ-চিকিৎসার শিকার হয়ে থাকেন।

রোগ নির্ণয়

কোলন ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য প্রধান উপায় হলো কোলন্সকোপি ও বায়োপসি। বায়োপসি দ্বারা ক্যান্সার নির্ণয়ের পর সিটি স্ক্যান, রক্তে এন্টিজেন (CEA) এর পরিমাণ ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সারের ধাপ নির্ণয় করা হয়।

চিকিৎসা পদ্ধতি

কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসার প্রধান উপায় হলো অপারেশন। অপারেশনের আগে বা পরে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। অপারেশনের সময় রেডিওথেরাপির ব্যবহার এখনো গবেষণাধীন। ক্যান্সারের চিকিৎসায় বহুল প্রচলিত একটি পদ্ধতি হলো মাল্টিডিসিপ্লিনারি এপ্রোচ, অর্থাৎ সার্জন, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, সাইকোথেরাপিস্ট, প্যাথলজিস্ট, ক্যান্সার কেয়ার নার্সসহ সকলের মিলিত প্রচেষ্টা ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রয়োজন।

মাল্টিডিসিপ্লিনারি এপ্রোচ

মাল্টিডিসিপ্লিনারি এপ্রোচ এর মূল লক্ষ্য হলো রোগীকে সঠিক এবং সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা প্রদান করা। এতে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকে, যা রোগীর সুস্থতার সম্ভাবনা বাড়ায়।

সচেতনতা ও প্রতিরোধ

কোলন ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের বিরুদ্ধে সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই হাকিম, কবিরাজ, ঝাড়-ফুঁকের ওপর বিশ্বাস করেন, যেখানে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা উপলব্ধ। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম। রোগীদের প্রতি অনুরোধ, কোনো রোগ সম্পর্কে পরিচিত জনের পরামর্শ না নিয়ে নূন্যতম এমবিবিএস চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

সচেতনতার গুরুত্ব

সচেতনতা রোগটিকে প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করতে সহায়ক। প্রথম দিকে রোগ শনাক্ত করতে পারলে ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগও সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব। সুতরাং, সচেতন থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।

শেষকথা

কোলন ক্যান্সার প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করা গেলে এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা হলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এটি একটি জটিল রোগ হলেও এর উপযুক্ত চিকিৎসা এবং সচেতনতা রোগটি প্রতিরোধ ও নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমান সময়ে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের সমন্বিত প্রচেষ্টা ক্যান্সার নিরাময়ে অত্যন্ত সহায়ক। কাজেই, নিজেকে এবং আপনার প্রিয়জনকে সচেতন রাখুন এবং সুস্থ জীবনযাপন করুন।

Leave a Comment