গ্রীষ্মকালের শুরুতেই তাপমাত্রা সহ্য সীমার বাইরে চলে গেছে। এ বছর রমজান মাসও পড়েছে এই প্রচণ্ড গরমে। এছাড়া, করোনাভাইরাসের প্রভাবও এখনও কাটেনি। সব মিলিয়ে আমাদের জন্য এ সময়টি অত্যন্ত কঠিন।
প্রচণ্ড গরম ও রোদের কারণে এ সময় শরীরের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে, এবং খাদ্য ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। এই সময়ে সুস্থ থাকতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক মাথায় রাখতে হবে।
অতিরিক্ত তাপমাত্রায় অসুস্থতা
অতিরিক্ত তাপমাত্রায় পানিশূন্যতা, হিট এগজশান, এমনকি হিট স্ট্রোকও হতে পারে। খুব গরমে অবসাদ, মাথাব্যথা, বমিভাব, দুর্বলতা, পেশিতে ব্যথা এবং প্রচণ্ড তৃষ্ণা অনুভূত হতে পারে। হিট স্ট্রোকের পর্যায়ে গেলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। এ রকম হলে রোগীকে শীতল স্থানে নিয়ে যেতে হবে এবং মুখে সামান্য পানি, তরল খাওয়ার এবং স্যালাইন বা লবণ মেশানো পানীয় দিতে হবে। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
প্রচণ্ড গরমে করণীয়
এই মহামারির পরিস্থিতিতে প্রচণ্ড গরমে সবচেয়ে ভালো হলো প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না যাওয়া। বাইরে গেলে সূর্যের তাপ এড়িয়ে চলুন, পাতলা ও হালকা রঙের সুতি কাপড় পরুন, ছাতা ও সানগ্লাস ব্যবহার করুন। প্রচুর পানি ও তরল পান করতে হবে। ইফতারের সময় লবণ মেশানো পানীয় বা ফলের রস গ্রহণ করতে পারেন। তবে কিডনি বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য পানি, লবণ এবং ফলের রস গ্রহণের পরিমাণ চিকিৎসকের পরামর্শমাফিক হওয়া উচিত।
নিরাপদ পানি ও খাবার
গরমকালে নিরাপদ পানি ও খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাওয়ার পানি নিরাপদ না হলে তা থেকেই হতে পারে নানা রোগ। অস্বাস্থ্যকর পানি ও খাবার বদহজমসহ অন্যান্য পেটের সমস্যার কারণ হতে পারে। ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস ইত্যাদি রোগও ছড়াতে পারে। এ ধরনের রোগ এড়াতে বাইরের খোলা খাবার, ইফতারি, পথের ধারের মুখরোচক খাবার, শরবত, আখের রস, জুস, আইসক্রিম ইত্যাদি খাবার পরিহার করুন।
বাড়িতে পানি ফুটিয়ে পান করুন। বাইরে গেলে বাড়ি থেকে পানি নিয়ে যান। খাবার ঢেকে রাখুন এবং নষ্ট হতে পারে এমন খাবার ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। রান্না করার পর খাবার দ্রুত খেয়ে ফেলুন। খাদ্যসামগ্রী কাটাকুটি, রান্না, পরিবেশন এবং খাওয়ার আগে নিয়মমাফিক হাত ধোবেন।
ত্বকের সুস্থতা
গরমে ঘাম এবং ঘামাচি হওয়া স্বাভাবিক। বেশি ঘামলে পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। ঘামাচি এবং অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা প্রতিরোধে গরম এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। ত্বকের সমস্যার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। রোদে গেলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন এবং সকাল ১০টার পর রোদে না যাওয়ার চেষ্টা করুন।
আরও কিছু করণীয়
খুব গরমেও কারও কারও ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাপমাত্রার হঠাৎ তারতম্যের কারণে সাইনোসাইটিস হতে পারে। অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি, বরফ, আইসক্রিম ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করলে ঘরের তাপমাত্রা সহজ ও সহনীয় সীমার মধ্যে রাখুন।
গরমে পানির গুরুত্ব
পানির গুরুত্ব গরমকালে অনেক বেড়ে যায়। শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হওয়ার কারণে শরীরে পানির ঘাটতি হয়। এ কারণে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। তৃষ্ণা না লাগলেও পানি পান করুন। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে দই, ফলের রস, ডাবের পানি ইত্যাদি পানীয় গ্রহণ করতে পারেন।
বিশ্রাম ও ঘুম
গরমে সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুমের প্রয়োজন। রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুমের সময় ঘর ঠান্ডা রাখুন। দিনের বেলা একটু বিশ্রাম নিলে শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার হবে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস
গরমকালে হালকা ও পুষ্টিকর খাবার খান। শাকসবজি, ফলমূল, দই, মাছ, মুরগি, ডাল ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখুন। তেলযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করুন। বেশি মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। ইফতারে ফলমূল, সালাদ, শাকসবজি, খেজুর, দই, শশা ইত্যাদি খাবার রাখুন।
শেষ কথা
গরমে সুস্থ থাকার জন্য সচেতনতা ও সঠিক নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাপমাত্রা থেকে নিজেকে রক্ষা করার পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান এবং বিশ্রামের মাধ্যমে আপনি সুস্থ থাকতে পারেন। এছাড়া, মহামারির এই সময়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে পরিবারের সবাইকে সুস্থ রাখতে পারেন।
গ্রীষ্মকাল আসলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে এবং নিয়ম মেনে চললে সুস্থ থাকা সম্ভব। সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আপনি এবং আপনার পরিবার এই গরমের সময়টাকে সুস্থ ও নিরাপদে কাটাতে পারবেন।