সিলিয়াক রোগ একটি অপ্রচলিত কিন্তু গুরুতর জন্মগত সমস্যা। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির পরিপাকতন্ত্র গ্লুটেনের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়। গ্লুটেনযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে রোগীর বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এই নিবন্ধে আমরা সিলিয়াক রোগের কারণ, লক্ষণ, নির্ণয় প্রক্রিয়া এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করবো।
গ্লুটেন: একটি পরিচিতি
গ্লুটেন হল একধরনের প্রোটিন, যা গম, বার্লি, যব, এবং রাই শস্যের মধ্যে পাওয়া যায়। এটি সাধারণত বেকারি পণ্য, পাস্তা, সিরিয়াল ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। গ্লুটেনের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকলে, পরিপাকতন্ত্রের ক্ষুদ্র চুলের মতো ভিলাইগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ভিলাইগুলো খাবার হজমের জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এর ক্ষতি হলে পুষ্টি গ্রহণের ক্ষমতা কমে যায় এবং বিভিন্ন পুষ্টিগত সমস্যা দেখা দেয়।
সিলিয়াক রোগের কারণ
সিলিয়াক রোগের প্রধান কারণ হল গ্লুটেন। তবে এই সমস্যাটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জন্মগত। যাদের পরিবারে অন্য সদস্যদের গ্লুটেন অ্যালার্জি আছে, তারা এই রোগের ঝুঁকিতে বেশি থাকে। এছাড়াও, টাইপ ১ ডায়াবেটিস, অটোইমিউন থাইরয়েড সমস্যা, অ্যাড্রিনাল বা বৃক্কীয় গ্রন্থির সমস্যা, ডাউন সিনড্রোমের শিশুদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেশি।
সিলিয়াক রোগের লক্ষণ
সিলিয়াক রোগের লক্ষণগুলো বিভিন্ন হতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- পেটের সমস্যা: পেট ফাঁপা, পেটব্যথা, বমি ভাব বা বমি, ডায়রিয়া, দুর্গন্ধযুক্ত মল ইত্যাদি।
- অপুষ্টি: খাবার ভালোভাবে হজম না হওয়ার কারণে শরীরের বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজের অভাব দেখা দেয়।
- শারীরিক বৃদ্ধি: ওজন হ্রাস, সঠিকভাবে বৃদ্ধি না হওয়া, দাঁত ও হাড়ের সমস্যা, কৈশোর প্রাপ্তিতে দেরি ইত্যাদি।
- বড়দের সমস্যা: রক্তশূন্যতা, হাড় ক্ষয়, জয়েন্ট ব্যথা, স্নায়ুর সমস্যা, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয় প্রক্রিয়া
শিশু যখন বিভিন্ন ধরণের খাবারে অভ্যস্ত হতে শুরু করে, তখন যদি বিশেষ কিছু খাবার খেলেই তাদের ডায়রিয়া, পেটব্যথা, পেট ফাঁপা, বদহজমের মতো সমস্যা দেখা দেয়, তবে সতর্ক হতে হবে। সিলিয়াক রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্তে কিছু অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়। প্রয়োজন হলে বায়োপসির মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়।
সিলিয়াক রোগের প্রতিকার
সিলিয়াক রোগের তেমন কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। প্রধানত গ্লুটেনযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। গ্লুটেনমুক্ত ডায়েট অনুসরণ করতে হবে। যেসব খাবার গ্লুটেনমুক্ত সেগুলো হলো:
- চাল ও আলু: এগুলো গ্লুটেনমুক্ত এবং সহজলভ্য।
- ফলমূল ও সবজি: প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটেনমুক্ত।
- মাছ ও মাংস: প্রোটিনের প্রধান উৎস এবং গ্লুটেনমুক্ত।
- বাদাম ও কর্নজাতীয় খাবার: বিভিন্ন পুষ্টি সরবরাহ করে।
তবে দুধে অ্যালার্জি বা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স এবং ডিমে অ্যালার্জি থাকলেও খাবারে সাবধানী হতে হবে। সঠিক পুষ্টি বজায় রাখার জন্য ভিটামিন ও খনিজ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। সিলিয়াক রোগের চিকিৎসা নেই, তবে জীবনাচারের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অনেক দেশে গ্লুটেনমুক্ত আটা, ময়দা, বিস্কুট, নুডলস, পাস্তা ইত্যাদি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এই ধরনের পণ্য সহজলভ্য নয় এবং ব্যয়বহুল।
শেষকথা
সিলিয়াক রোগ একটি গুরুতর এবং জীবনভর চলমান সমস্যা হলেও, সঠিকভাবে রোগটি নির্ণয় ও গ্লুটেনমুক্ত ডায়েট অনুসরণ করলে স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব। সঠিক জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সিলিয়াক রোগীদের জীবনকে আরও সুন্দর ও সহজ করা যায়।