গরমে গর্ভবতী মহিলাদের কিছু বিশেষ যত্ন: সহায়ক টিপস ও পরামর্শ

গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার শরীরে স্বাভাবিকভাবেই রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। আর যদি এই সময়টা গরমের মৌসুমে হয়, তবে অতিরিক্ত গরম এবং অস্বস্তি আরও বেশি অনুভূত হয়। তাই গরমের সময়ে গর্ভবতী মহিলাদের কিছু বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। নিচে দেওয়া টিপসগুলো মেনে চললে গরমের সময় গর্ভবতী মহিলারা অনেক উপকার পেতে পারেন।

১. পর্যাপ্ত পানি ও তরল পানীয় পান করা

গরমের সময় শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়, ফলে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি খুবই ক্ষতিকর হতে পারে। তাই, সারাদিনে প্রচুর পানি পান করা উচিত। ডাবের পানি, ফলের রস, লাচ্ছি, লেবু পানি, এবং দই এসব খাবার গর্ভবতীদের শরীরে পানিশূন্যতা রোধে সহায়তা করে। প্রস্রাবের রঙ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এসব তরল পানীয় খেতে হবে। এছাড়া শরীর খুবই দুর্বল লাগলে স্যালাইন পানিও খাওয়া যেতে পারে।

২. সরাসরি রোদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা

গরমের সময়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সরাসরি রোদের মধ্যে না যাওয়াই ভালো। একান্তই যদি বাইরে যেতে হয়, তবে সানগ্লাস পরে, সানস্ক্রিন লোশন মেখে বের হওয়া উচিত। এছাড়া ছাতা বা টুপি ব্যবহার করেও সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। ঘরে অবস্থানের সময়েও খেয়াল রাখতে হবে যেন বেশি সময় ছায়ায় থাকা যায়।

৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া

গর্ভবতী মহিলাদের গরমের সময়ে অতিরিক্ত বিশ্রাম নিতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে এবং অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলতে হবে। চুলায় রান্নার কাজ থেকে বিরত রাখা উচিত। প্রয়োজনে অন্যজনের সাহায্য নেওয়া ভালো। আর ঘরের কাজ করতে হলে সকালের দিকে করা ভালো, কারণ তখন তাপমাত্রা কম থাকে।

৪. হালকা ও আরামদায়ক কাপড় পরা

গরমের সময়ে হালকা, ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক পোশাক পরা উচিত। সুতি কাপড় ব্যবহার করা ভালো, কারণ এটি তাপ শোষণ কম করে। পলিস্টার বা সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে চলাই উত্তম।

৫. নিয়মিত গোসল করা

গরমের সময়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত গোসল করা জরুরি। দিনে একাধিকবার গোসল করা যেতে পারে, বিশেষ করে ঘুমানোর আগে গোসল করে নিলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে এবং আরামদায়ক ঘুম হয়।

৬. অল্প করে বার বার খাওয়া

গর্ভবতী মহিলাদের একবারে বেশি না খেয়ে বার বার অল্প করে খাওয়া উচিত। এতে পরিপাক ক্রিয়া সহজ হয় এবং শরীরের ওপর চাপ কম পড়ে। শরীর কম তাপ উৎপাদন করে, ফলে গরম কম অনুভূত হয়।

৭. পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত খাবার খাওয়া

গর্ভকালীন সময়ে প্রোটিন, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রন যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। নানা প্রকার ফলমূল, শাকসবজি, ডাল, ডিম, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি খাওয়া ভালো। চর্বিযুক্ত ও অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

৮. ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় পরিত্যাগ করা

চা, কফি ও অন্যান্য ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলো রক্তচাপ ও শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে, যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ক্যাফেইন গর্ভের শিশুর উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

৯. বাইরের খোলা ও বাসি খাবার না খাওয়া

গরমের সময়ে রাস্তার ধুলোবালি ও মাছির সংস্পর্শে থাকা খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এসব খাবার থেকে ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে, যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিপজ্জনক।

১০. ঠাণ্ডা ও আরামদায়ক স্থানে ঘুমানো

গর্ভবতী মহিলাদের শোবার ঘর ঠাণ্ডা ও আরামদায়ক হওয়া উচিত। প্রচুর বাতাস প্রবাহের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাম পাশে কাত হয়ে ঘুমানো ভালো, এতে শরীরের ডান দিকের শিরায় চাপ কম পড়ে এবং দেহের নিম্নাংশ থেকে হৃদপিণ্ডে নিঃছিদ্র রক্ত প্রবাহ নিশ্চিত হয়। বিছানার চাদর সুতি কাপড়ের হওয়া উচিত, যাতে ঘুমানোর সময় গরম কম লাগে।

উপসংহার

একজন সুস্থ মা-ই একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে পারেন। তাই গর্ভকালীন সময়ে তাদের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। গরমের সময়ে আরও বেশি সচেতনতা ও যত্ন নিতে হবে। গরমে কোনো নারী গর্ভবতী থাকলে তার জন্য অবশ্যই বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি, কারণ একটু অসাবধানতা তার এবং তার অনাগত শিশুর জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।

এই টিপসগুলো মেনে চললে গরমের সময়ে গর্ভবতী মহিলারা অনেকটা আরাম ও স্বস্তি পাবেন, এবং গর্ভধারণকালীন সময়টি সহজে পার করতে পারবেন। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, এবং সঠিক যত্ন তাদের এবং তাদের অনাগত শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করবে।

Leave a Comment