সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক: লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিরোধ

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক: লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিরোধ

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি সমস্যা হল সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক, যা রোগীর অজান্তেই ঘটে থাকে। ‘দ্য ন্যাশনাল হার্ট, লাং অ্যান্ড ব্লাড ইনস্টিটিউট’-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর মোট হার্ট অ্যাটাকের তিন ভাগের এক ভাগ সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক। এই নিবন্ধে আমরা সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে রোগীরা সাধারণত কোনও তীব্র ব্যথা অনুভব করেন না। এই অ্যাটাকের কিছু সম্ভাব্য লক্ষণ হল:

  • শ্বাসকষ্ট: রোগীরা সহজেই শ্বাসকষ্টে ভোগেন।
  • বুক ব্যাথা: যদিও ব্যথা কম হতে পারে, তবে বুকের মাঝখানে হালকা চাপ বা অস্বস্তি হতে পারে।
  • অবসাদ: সাধারণত অনেক সময় ধরে অবসাদ বোধ করা।
  • অতিরিক্ত ঘাম: হঠাৎ করে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম ঝরা।

অনেকক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো অন্যান্য সাধারণ অসুস্থতার লক্ষণ হিসেবে ধরা পড়ে। তাই রোগীরা অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ বুঝতে পারেন না।

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের কারণ

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের কারণগুলো সাধারণত নিয়ন্ত্রনযোগ্য। কিছু প্রধান কারণ হল:

  • হৃদরোগের রক্ত সরবরাহ নালী ব্লকজনিত সমস্যা: এই কারণে হার্ট পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না।
  • উচ্চ রক্তচাপ: বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের কারণে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি।
  • উচ্চ কোলেস্টোরল: খারাপ কোলেস্টোরল বেশী হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
  • অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: ধূমপান, মদ্যপান, এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক কাদের বেশি হয়

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক সাধারণত নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়:

  • মহিলা: মহিলাদের মধ্যে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।
  • ডায়াবেটিস রোগী: ডায়াবেটিস রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো বুঝতে সমস্যা হয়।
  • বয়স্ক ব্যক্তি: বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায়।

ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির কারণে তাদের শরীরের বোধশক্তি কমে যাওয়ার ফলে তীব্র ব্যথা অনুভূত হলেও তারা বুঝতে পারেন না।

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার উপায়

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার জন্য কিছু কার্যকর পদক্ষেপ রয়েছে:

  • স্বাস্থ্যসম্মত খাবার: প্রতিদিন স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। শাকসবজি, ফলমূল এবং পূর্ণ শস্য গ্রহণ করতে হবে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে হবে।
  • ধূমপান পরিহার: ধূমপান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ: নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে।

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক নিয়ন্ত্রণে করণীয়

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর আরও একটি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে। এ থেকে রক্ষা পেতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • বুক ব্যথা বা অস্থিরতা: বুকে ব্যথা বা অস্থিরতা দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।
  • নিয়মিত চিকিৎসা: নিয়মিত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বা ডায়াবেটোলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে।

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা

সাধারণ হার্ট অ্যাটাক এবং সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় বিশেষ তফাৎ নেই। তবে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • রক্ত পাতলা করার ওষুধ: হেমারিন বা অ্যাসপিরিনের মতো ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণ: স্ট্যাটিনের মতো ওষুধের মাধ্যমে কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণ করা।
  • জীবনযাপনের পরিবর্তন: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান পরিহার এবং নিয়মিত ব্যায়াম।

প্রাথমিক পদক্ষেপ

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো বোঝার জন্য কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
  • ইসিজি (ECG) এবং ইকোকার্ডিওগ্রাম: হার্টের কার্যক্রম পর্যালোচনা করার জন্য ইসিজি এবং ইকোকার্ডিওগ্রাম করানো।

শেষকথা

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক একটি গুরুতর সমস্যা যা অনেক সময় রোগীর অজান্তেই ঘটে যায়। এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা এবং নিয়মিত চিকিৎসার প্রয়োজন। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক চিকিৎসা পরামর্শের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

Leave a Comment