থানকুনি পাতা আমাদের দেশে একটি বহুল পরিচিত ভেষজ উদ্ভিদ। এর ছোট গোলাকৃতি পাতা প্রাচীনকাল থেকেই নানা রোগের নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। থানকুনি পাতার রসের রয়েছে অসাধারণ রোগ নিরাময় ক্ষমতা। নিয়মিত এই পাতা বা এর রস খেলে শরীরের কর্মক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যায়। চলুন এই পাতার কিছু বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
হজম ক্ষমতার উন্নতি
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে থানকুনি পাতায় রয়েছে হজম সহায়ক উপাদান যা দেহে অ্যাসিডের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে খাবার হজম সঠিকভাবে হয় এবং বদ-হজম বা গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা দূর করে। এছাড়াও, থানকুনি পাতার নিয়মিত সেবন হজম ক্ষমতার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চুল পড়া কমাতে
যারা সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন থানকুনি পাতা খান, তাদের মাথার স্কাল্পে যথেষ্ট পুষ্টি পৌঁছায় এবং চুল পড়ার মাত্রা কমে যায়। থানকুনি পাতা থেঁতো করে এর সাথে তুলসি পাতা এবং আমলা মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে চুলে লাগালে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলে চুল পড়া অনেক কমে যাবে।
শরীরকে টক্সিন মুক্ত রাখা
প্রতিদিন সকালে থানকুনি পাতার রসের সাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে রক্তের ক্ষতিকর টক্সিন বেরিয়ে যায়। ফলে শরীর বিভিন্ন অসুখ থেকে রক্ষা পায় এবং শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
শরীরের ক্ষত নিরাময়
থানকুনি পাতায় স্পেয়োনিনস ও অন্যান্য উপকারি উপাদান আছে যা শরীরের ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। দুর্ঘটনাজনিত ক্ষত স্থানে অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতা বেঁটে লাগালে দ্রুত নিরাময় হয়।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি
ত্বকের পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে থানকুনি পাতায় অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড ও ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে। এসব উপাদান ত্বকের পুষ্টি সাধনের পাশাপাশি বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। ফলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি পায় এবং ত্বক কম বয়সে বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে।
আমাশয়ের সমস্যা দূর করা
আমাশয়ের সমস্যায় থানকুনি পাতা খুবই কার্যকর। টানা ৭ দিন সকালে খালি পেটে থানকুনি পাতা বেটে তার রসের সাথে অল্প চিনি মিশিয়ে দিনে দুইবার খেলে আমাশয়ের সমস্যা দূর হয়।
পেটের অসুখ ও ক্রিমি প্রতিরোধ
পেটের অসুখ সারাতে আম গাছের ছাল, আনারসের পাতা, হলুদের রস ও থানকুনি পাতা মিশিয়ে বেটে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এই মিশ্রণ ক্রিমির প্রকোপও কমায়।
কাশি নিরাময়
কাশি কমাতে থানকুনি পাতার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সাথে অল্প চিনি মিশিয়ে খেলে কাশি দ্রুত কমে যায়। এক সপ্তাহ এক নাগাড়ে খেলে কঠিন কাশির সমস্যাও সেরে যায়।
জ্বরের প্রকোপ কমানো
জ্বরের সময় ১ চামচ থানকুনি এবং ১ চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর দ্রুত সেরে যায়। এটি শারীরিক দুর্বলতাও কমায়।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করা
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতেও থানকুনি পাতা সহায়ক। আধা লিটার দুধে ২৫০ গ্রাম মিশ্রি ও সামান্য থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দ্রুত সেরে যায়।
উপসংহার
থানকুনি পাতা আমাদের দেশের অত্যন্ত পরিচিত এবং সহজলভ্য একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এর ভেষজ ও ওষুধি গুণাগুণ বহু পুরনো। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে থানকুনি পাতার রসের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সুস্থ থাকতে থানকুনি পাতা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। এই পাতার অবিশ্বাস্য উপকারিতার জন্য এটি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।