শিশু জন্মের পর অনেক মা-বাবা গরুর দুধ বা বাজারের প্যাকেটজাত দুধ খাওয়ানো শুরু করেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুর জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধুমাত্র মায়ের দুধই যথেষ্ট এবং এই সময়ে পানি দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। আসুন জেনে নিই, কেন মায়ের দুধ শিশুর জন্য সবচেয়ে ভালো এবং কৌটার দুধের ক্ষতিকর দিকগুলো কী।
মায়ের দুধের উপকারিতা
পূর্ণ সুষম খাদ্য: মায়ের দুধে খাদ্যের সব উপাদান—শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, মিনারেল—সঠিক মাত্রায় থাকে। এটি শিশুর পূর্ণ পুষ্টির জন্য অপরিহার্য।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: মায়ের দুধে থাকা অ্যান্টিবডি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যা তাকে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের ভিত্তি: মায়ের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে মা ও সন্তানের মধ্যে গভীর ভালবাসার বন্ধন তৈরি হয়, যা শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়ক।
মায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা: নিয়মিত মায়ের দুধ খাওয়ালে মায়ের স্তন ক্যান্সার এবং ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। এছাড়া প্রসব পরবর্তী রক্তপাত কমে এবং জরায়ুর দ্রুত পূর্বাবস্থায় ফিরে আসা নিশ্চিত হয়।
সহজলভ্যতা ও সাশ্রয়ী: মায়ের দুধ সহজলভ্য এবং বিনামূল্যে পাওয়া যায়। অন্যদিকে, বাজারে প্রাপ্ত দুধের দাম অনেক বেশি এবং তা কিনতে বাড়তি খরচের বোঝা থাকে।
বাহিরের দুধের ক্ষতিকর দিকসমূহ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া: বাহিরের দুধে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি না থাকায় শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে সে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে।
অ্যালার্জি ও স্থূলতা: যে বাচ্চারা বাহিরের দুধ খায় তাদের মধ্যে স্থূলতা এবং বিভিন্ন অ্যালার্জি জনিত রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়।
পেটের সমস্যা: বাহিরের দুধে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে, যা শিশুর পেটে গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে। ফলে পেট ব্যথা, বমি এবং অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয়।
মায়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকি: বাচ্চাকে বাহিরের দুধ খাওয়ানোর ফলে মায়ের স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব পড়ে। প্রসব পরবর্তী রক্তপাত বেড়ে যেতে পারে এবং স্তন ও ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
অতিরিক্ত খরচ: বাজারে প্রাপ্ত দুধের দাম অনেক বেশি, যা পরিবারের ওপর অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপায়।
মানসিক সম্পর্কের ঘাটতি: বাহিরের দুধ খাওয়ানোর ফলে মায়ের সাথে শিশুর আত্মিক সম্পর্কের দুর্বলতা দেখা দেয়।
মায়ের দুধের অতিরিক্ত উপকারিতা
পুষ্টি এবং বিকাশ: মায়ের দুধে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শিশু মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক। এছাড়া এটি চোখের দৃষ্টিশক্তি এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ।
পরিপাকের সুবিধা: মায়ের দুধ সহজপাচ্য, যা শিশুর পরিপাক প্রক্রিয়াকে সহজ ও সাবলীল করে। অন্যদিকে, বাহিরের দুধ অনেক সময় শিশুর জন্য হজম করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এন্টি-অক্সিডেন্ট: মায়ের দুধে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শিশুর কোষগুলোকে মুক্ত র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রথম ছয় মাস শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো উচিত। ছয় মাস পর থেকে শিশুর খাদ্য তালিকায় ধীরে ধীরে অন্যান্য খাবার যুক্ত করা যেতে পারে, তবে মায়ের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। দুই বছর বা তারও বেশি সময় পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
সংক্ষেপে
মায়ের দুধ শিশু এবং মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। এটি সহজলভ্য, সাশ্রয়ী, এবং শিশুর সঠিক পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। বাহিরের দুধে কিছু উপকারিতা থাকতে পারে, তবে তার ক্ষতিকর দিকগুলো অনেক বেশি। তাই শিশুর সুস্বাস্থ্য এবং মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য বাহিরের দুধ পরিহার করে মায়ের দুধ খাওয়ানোই উত্তম।
শিশুর জীবনের প্রথম কয়েক বছর তার ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরি করে। সঠিক পুষ্টি ও যত্ন প্রদান করে আমরা তাদের সুস্থ এবং সমৃদ্ধ জীবনের পথে এগিয়ে নিতে পারি। মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই—এটি প্রকৃতির দেওয়া এক অসাধারণ উপহার, যা আমাদের সঠিকভাবে গ্রহণ এবং ব্যবহার করতে হবে।