আমলকি, যা ভেষজ ফল হিসেবে পরিচিত, আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক বেশি। আমলকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ও বিভিন্ন রোগ সারাতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। আজ আমরা আমলকির পুষ্টি ও ওষুধি গুণাবলী সম্পর্কে জানব।
আমলকির পরিচিতি
আমলকি (ফাইলানথাস এমব্লিকা) একটি প্রাচীন ওষুধি গাছ। এই গাছের ফল, পাতা, এবং বাকল সবকিছুই ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটি বাংলাদেশের একটি প্রচলিত ফল, যা সহজলভ্য এবং সস্তা। আমলকির পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুণাবলীর জন্য এটি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।
আমলকির পুষ্টিগুণ
আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা পেয়ারা, কাগজি লেবু, কমলা, আপেল, আম, এবং কলার চেয়ে বহুগুণ বেশি। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন। যদি কেউ দিনে দুটি আমলকি খায়, তাহলে সে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি পেতে পারে।
আমলকিতে ভিটামিন সি ছাড়াও ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস, যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকাল থেকে রক্ষা করে।
আমলকির ওষুধি গুণাবলী
আমলকির ওষুধি গুণাবলী অসাধারণ। নিচে কিছু প্রভাবশালী গুণাবলী উল্লেখ করা হলো:
- স্কার্ভি প্রতিরোধে: আমলকি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, যা ভিটামিন সি-এর অভাবে হয়। দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, মাড়িতে ঘা হওয়া, শরীর দুর্বল হওয়া, এবং চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হওয়া এসব সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
- আলসার চিকিৎসায়: আমলকি পেপটিক আলসার নিরাময়ে কার্যকরী। এটি পাকস্থলীর আলসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস: আমলকিতে সলিউবল ফাইবার থাকে, যা হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এটি পাইলসের উপশমেও সহায়ক।
- ক্ষুধামন্দা দূর করতে: মাখন ও মধুর সঙ্গে আমলকির গুঁড়া মিশিয়ে খেলে ক্ষুধামন্দা দূর হয়।
- দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি: আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে, যা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়া চোখের লাল হওয়া, চুলকানো, এবং পানি পড়া রোধ করে।
- গলা ব্যথা ও ঠান্ডা দূর করতে: আমলকির গুঁড়োর সাথে মধু মিশিয়ে দিনে ৩-৪ বার খেলে গলা ব্যথা ও ঠান্ডা দূর হয়।
- হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে: আমলকি খেলে খারাপ কোলেস্টেরল কমে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
- রক্তের সুগার কমাতে: আমলকিতে পলিফেনল রয়েছে, যা রক্তে অক্সিডেটিভ শর্করা থেকে শরীর রক্ষা করে এবং ইনসুলিন শোষণ করতে সহায়তা করে, যা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।
- দেহের চর্বি কমাতে: আমলকি নিয়মিত খেলে শরীরের প্রোটিনের স্তর বৃদ্ধি পায়, যা দেহের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
- হাড় মজবুত করতে: আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা হাড় মজবুত করতে সহায়ক।
- রক্ত পরিষ্কার করতে: আমলকি রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়ক। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে।
- চুলের যত্ন ও খুশকি দূর করতে: আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে। এটি চুলের গোড়া শক্ত করে, দ্রুত চুল গজায়, খুশকি মুক্ত করে এবং চুল পাকা রোধ করে। মধুর সাথে আমলকির রস মিশিয়ে খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
আমলকি ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
আমলকি শুধু পুষ্টি ও ওষুধি গুণে সমৃদ্ধ নয়, এটি বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, এবং খনিজ পদার্থগুলো শরীরকে শক্তিশালী করে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আমলকি
আমলকি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এটি স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। নিয়মিত আমলকি খেলে শরীরের বিভিন্ন অংশ সুরক্ষিত থাকে এবং শরীর সুস্থ থাকে।
আমলকি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং সুস্থ থাকুন। এই ক্ষুদ্র ফলের বড় গুণাগুণ আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।