বর্তমানে যেসব পরিবারে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই চাকরিজীবী, সেখানে তিনবেলা রান্না করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে, তাদের নির্ভর করতে হয় রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজের ওপর। তবে ফ্রিজের সঠিক ব্যবহার না জানার কারণে অনেক সময় খাবারের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। আজ আমরা জানবো কিভাবে ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণ করতে হয়, কতদিন রাখতে হয় এবং কোন খাবার কোন তাপমাত্রায় রাখা উচিত।
ফ্রিজের তাপমাত্রা কেমন হওয়া উচিত?
ফ্রিজ সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত থাকে: নরমাল ফ্রিজ এবং ডিপ ফ্রিজ। নরমাল ফ্রিজের তাপমাত্রা সব সময় ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা উচিত এবং ডিপ ফ্রিজের তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা -১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা উচিত। খাবারের পরিমাণ অনুযায়ী তাপমাত্রা সামঞ্জস্য রাখতে হবে।
ফ্রিজে কোন খাবার কতদিন রাখা যাবে?
১. হট ডগ, পিৎজা, চিকেন প্যাটিস বা বার্গার জাতীয় খাবার: খোলা অবস্থায় ১ সপ্তাহ, না খোলা অবস্থায় ২ সপ্তাহ পর্যন্ত রাখা যায়।
২. কাঁচা মাংস: ৩-৫ দিন ভালো থাকে। তবে কাঁচা মুরগির মাংস ডিপ ফ্রিজে ১ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। কাটা অবস্থায় ৫-৬ মাসের মধ্যে রান্না করা উত্তম।
৩. স্যুপ জাতীয় খাবার: সাধারণত ৩-৪ দিন ভালো থাকে। রান্না করা মুরগির মাংস, মাছ বা ডিমের কোনো আইটেম ৩-৪ দিন পর্যন্ত ফ্রিজে রাখা যায়।
কোন খাবারের জন্য ফ্রিজের কোন অংশ ব্যবহার করবেন?
কাঁচা মাছ ও মাংস
কাঁচা মাছ ও মাংস ফ্রিজের ডিপ অংশে রাখা উচিত। এগুলো ১ ডিগ্রির কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। কাঁচা মাছ ও মাংস রাখার আগে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ফল ও সবজি
ফ্রিজে বিশেষ কিছু ফল যেমন কলা, জাম, নাশপাতি এবং টমেটো রাখা উচিত নয়, কারণ এগুলো ইথাইলিন গ্যাস উৎপন্ন করে যা সবজিকে তাড়াতাড়ি নষ্ট করে দিতে পারে। সবজি ও ফল এয়ারটাইট কনটেইনারে রাখা ঠিক নয়। কাগজের প্যাকেটে বা খবরের কাগজ দিয়ে মুড়ে রাখা যেতে পারে।
ফলের রস, সস, জ্যাম, পানি ও ইনসুলিন
ফ্রিজের দরজার নিচের তাকে যেখানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকে সেখানে রাখা উচিত।
ঘি ও মাখন
এয়ারটাইট পাত্রে রেখে ফ্রিজে রাখা যেতে পারে।
আইসক্রিম ও প্যাকেটজাত ফ্রোজেন ফুড
ডিপ ফ্রিজে রাখা উচিত তবে তাপমাত্রার সামান্য হেরফের হলে এগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
দুধ ও টক দই
দুধ ফ্রিজের নিচের তাকে রাখা ভালো যেখানে তাপমাত্রা ১-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য টক দই ডিপ ফ্রিজে রাখা উচিত।
রান্না করা খাবার
রান্না করা খাবার ফ্রিজের নরমাল অংশের ওপরের তাকে রাখা উচিত। রান্না করা গরু, খাশি বা মুরগির মাংস, মাছ এবং সিদ্ধ ডিম ৩-৪ দিনের মধ্যে খেয়ে ফেলা উচিত।
কাটা পেঁয়াজ ও বাটা মসলা
কাটা পেঁয়াজ এয়ারটাইট বক্সে রেখে সামান্য লবণ ছিটিয়ে দিলে ভালো থাকবে। বাটা মসলা বক্সে ভরে রাখা উচিত।
ডিম
ডিম ফ্রিজের আলাদা জায়গায় মোটা অংশ নিচের দিকে ও সরু অংশ উপরে রাখা উচিত।
ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণের সঠিক নিয়ম
অনেকে একসঙ্গে অনেক মাংস কিনে দীর্ঘদিন ফ্রিজে রেখে দেন। ধীরে ধীরে সেই মাংস ব্যবহার করেন। একসঙ্গে বেশি খাবার রেখে দিলে রান্নার আগে কাঁচা মাছ বা মাংস পুরোটাই ভিজিয়ে রাখতে হয়, এতে খাবারের পুষ্টি ও স্বাদ নষ্ট হয়। তাই খাবার ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে রাখা ভালো।
ফ্রিজে কাটা লেবু রাখলে ও মাঝে মাঝে বেকিং সোডা মেশানো পানি দিয়ে ফ্রিজ মুছে নিলে দুর্গন্ধ হবে না। এভাবে সঠিকভাবে ফ্রিজ ব্যবহার করে খাদ্যমান ও ফ্রিজের দীর্ঘস্থায়ীত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।
কিছু অতিরিক্ত পরামর্শ
- পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার: সবজি বা ফল পলিথিন ব্যাগে না রেখে কাগজের প্যাকেটে মুড়ে রাখলে ভালো থাকে।
- শাক-সবজি সংরক্ষণ: মৌসুমি শাক-সবজি সিদ্ধ করে বিভিন্ন বক্সে ভরে রাখা যায়। এতে দীর্ঘদিন পর্যন্ত গুণগতমান ভালো থাকে।
- মাংস ধোয়া: কাঁচা মাংস ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখা উচিত যাতে বাজে গন্ধ না হয় এবং দীর্ঘদিন সতেজ থাকে।
- বিভিন্ন পাত্র ব্যবহার: খাবার রাখার পাত্রগুলি পরিষ্কার এবং এয়ারটাইট হতে হবে যাতে খাবারের গন্ধ ও স্বাদ অক্ষুণ্ণ থাকে।
- বেকিং সোডা ব্যবহার: ফ্রিজে বেকিং সোডা রাখলে দুর্গন্ধ দূর হয় এবং এক খাবারের গন্ধ অন্য খাবারে প্রবেশ করে না।
শেষকথা
ফ্রিজের সঠিক ব্যবহার না জানলে খাবারের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই সঠিকভাবে ফ্রিজ ব্যবহার করে খাদ্য সংরক্ষণ করলে তা দীর্ঘস্থায়ী এবং পুষ্টিকর হবে। খাবারের তাপমাত্রা, সংরক্ষণ পদ্ধতি ও সময় মেনে চললে খাদ্যমান রক্ষা করা সম্ভব। সঠিকভাবে ফ্রিজ ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করুন।