টক দই খাওয়ার উপকারিতা

টক দই একটি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার। এতে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও প্রোটিন পাওয়া যায়, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট না থাকায় এটি সহজেই পছন্দনীয় একটি খাবার। টক দইয়ের পুষ্টিগুণ দুধের চেয়েও বেশি এবং রোগ প্রতিরোধে এটি অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। আসুন, জেনে নিই টক দইয়ের বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে।

টক দই খাওয়ার উপকারিতা:

১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:

টক দইয়ের খাদ্যগুণ অসাধারণ। এতে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন B2, ভিটামিন B12 ইত্যাদি রয়েছে। টক দইয়ে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া শরীরে রোগ উৎপাদনকারী ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ঢুকতে বাঁধা দেয়। তাই নিয়মিত টক দই খেলে তা দেহকে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। এটি ঠান্ডা লাগা, সর্দি ও জ্বর রোধেও ভালো কাজ করে।

২। হজম শক্তি বৃদ্ধি:

টক দইয়ে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া শরীরের হজম শক্তি বাড়ায়। দইয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া লেক্টোজকে ভেঙ্গে লেক্টিক এসিড তৈরি করে, ফলে গ্যাসের সমস্যা কম হয়। এতে যে আমিষ থাকে তা দুধের চেয়ে সহজে ও কম সময়ে হজম হয়। তাই যাদের দুধের হজমে সমস্যা হয় তারা টক দই খেতে পারেন।

৩। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে:

গ্রীষ্মকালে টক দই শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং গরমের সময় শরীরকে সজীব রাখে। তাই গ্রীষ্মকালে নিয়মিত টক দই খেতে পারেন।

৪। দেহের ওজন কমাতে:

টক দই একটি ভালো স্ন্যাকস, কারণ এতে ফ্যাট কম থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ থাকে যা হজম করতে শরীরের অনেক সময় লাগে। ফলে পেট ভরা বোধ হয় এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। পুষ্টিহীন ক্যালরি যুক্ত ফাস্টফুড বা জাংক ফুড না খেয়ে টক দই খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

৫। হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করা:

টক দইয়ে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন B2, ভিটামিন B12 থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি থাকার কারণে হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে। অষ্টিওপোরেসিস ও আরথ্রাইটিস বা বাত ব্যথার রোগীরা নিয়মিত টক দই খেলে উপকার পেতে পারেন। বিশেষ করে মহিলাদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী।

৬। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে:

কম ফ্যাটযুক্ত টক দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিকস রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্ত শোধন বা পরিস্কার রাখতে ভূমিকা রাখে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা নিয়মিত টক দই খেয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীরা নিয়মিত টক দই খেয়ে তাদের অসুখগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।

৭। অকাল বার্ধক্য রোধে:

টক দই ব্রেইনকে স্ট্রেস দূরকারী উপকারী অ্যামাইনো এসিড “টাইরোসিন” সরবরাহ করে, যা মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং ক্লান্তি কমায়। এটি শরীরে টক্সিন জমতে বাধা দেয়, ফলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। টক দই খাদ্যনালী পরিষ্কার রেখে শরীরকে সুস্থ রাখে ও ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধসহ অকাল বার্ধক্য থেকে বাঁচায়।

শেষকথা

টক দই একটি পুষ্টিকর, তৃপ্তিকর, সর্বজন সমাদৃত ও সহজলভ্য খাবার। খাদ্যগুণের নিরিখে টক দই একেবারেই অলরাউন্ডার। ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন B2, ভিটামিন B12 ইত্যাদি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ টক দই আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হজম শক্তি বৃদ্ধি, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ওজন কমানো, হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করা, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো এবং অকাল বার্ধক্য রোধসহ বিভিন্ন উপকারে আসে। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত নিয়মিত টক দই খাওয়া, যা তাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে।

Leave a Comment