ডালিম বা বেদানা শুধু স্বাদে ও রঙে আকর্ষণীয় নয়, এটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে বিশেষ কার্যকর। যদিও এটি কিছুটা দামি, তবুও এর উপকারিতার কথা বিবেচনা করে নিয়মিত ডালিম খাওয়া উচিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক ডালিমের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
ডালিমের পুষ্টিগুণ
ডালিম একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল। এক কাপ ডালিম দানায় আপনার দৈনন্দিন চাহিদার ৩০ শতাংশ ভিটামিন সি, ৩৬ শতাংশ ভিটামিন কে, ১৬ শতাংশ ভিটামিন বি৯ এবং ১২ শতাংশ পটাশিয়াম থাকে। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণ ফসফরাস থাকে যা অনেক ফলের তুলনায় অনেক বেশি।
একটি ১০০ গ্রাম ডালিমে রয়েছে:
- পানি: ৭৮%
- আমিষ: ১.৫%
- স্নেহ: ০.১%
- আঁশ: ৫.১%
- শর্করা: ১৪.৫%
- খনিজ: ০.৭%
- ক্যালসিয়াম: ১০ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম: ১২ মিলিগ্রাম
- অক্সালিক এসিড: ১৪ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস: ৭০ মিলিগ্রাম
- রিবোফ্লাভিন: ০.৩ মিলিগ্রাম
- নিয়াসিন: ০.৩ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি: ১৪ মিলিগ্রাম
ডালিমের ঔষধি গুণাবলী
ডালিমের বিভিন্ন ঔষধি গুণাবলী রয়েছে যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এর আকর্ষণীয় রং ও স্বাদের পাশাপাশি এর পুষ্টি উপাদান ও স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা বলা যায় না।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
ডালিমে প্রচুর পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন ডালিমের রস পান করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রিন টির থেকে তিন গুণ বেশি কার্যকরী। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্থোসিয়ানিন ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করে এবং দেহ কোষকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। জন্ডিস, বুক ধড়ফড়ানি, বুকের ব্যথা, কাশি ও কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করতে এর ভূমিকা রয়েছে।
হৃদরোগ প্রতিরোধে
ডালিম হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আমাদের আধুনিক জীবনযাত্রায় হৃদরোগ একটি সাধারণ সমস্যা। ডালিমের রস ধমনীতে জমে থাকা চর্বির স্তরকে গলিয়ে পরিষ্কার রাখতে সহায়ক। এছাড়া এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রতিদিন একটি ডালিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে
ডালিম ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ডালিমের পোমেগ্র্যানেট অয়েল ময়শ্চারাইজার হিসেবে ভালো কাজ করে এবং ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এতে থাকা ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, সাইট্রিক অ্যাসিড ও ট্যানিন ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক।
রক্তশূন্যতা দূর করতে
ডালিমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। এটি রুচি বৃদ্ধি, কোষ্টকাঠিন্য রোধেও কার্যকরী।
হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায়
ডালিম হাড়ের সংযোগস্থলে কার্টিলেজের ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়ক। এতে পটাশিয়াম ও পলিফেনল থাকে যা কার্টিলেজ রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। হাড়ের রোগ যেমন অস্টিওপোরোসিস থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় ডালিম খেলে।
সর্দি-কাশি দূর করতে
ডালিমে পটাশিয়াম ও ফাইবার থাকে যা ইমিউন সিস্টেম মজবুত করে। সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পেতে ডালিমের রস ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
দাঁতের যত্নে
ডালিমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা দাঁতে প্লাক জমতে বাধা দেয়। মাড়ির রোগ জিনজিভাইটিস প্রতিরোধে ডালিমের ভূমিকা অপরিসীম। তাই প্রতিদিন অল্প হলেও ডালিম খাওয়া উচিত দাঁতের সুস্থতার জন্য।
রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডালিম অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে ডালিমের ফ্লোরোজেনিক অ্যাসিড রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধে
ডালিমের রস স্কিন ক্যান্সার ও প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে ডালিমের রস ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করে।
উপসংহার
ডালিমের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অসাধারণ গুণাবলীর জন্য এটি একটি স্বতন্ত্র ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডালিম রাখা উচিত। এতে করে আমরা বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারি।