আমড়া, আমাদের দেশের একটি সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় ফল, এখন বাজারে সহজেই এবং সুলভে পাওয়া যায়। সাধারণত কাঁচা খাওয়ার পাশাপাশি সুস্বাদু আচার, চাটনি এবং জেলি তৈরিতে আমড়া ব্যবহার করা হয়। মুখে রুচি বৃদ্ধিসহ অসংখ্য পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে এই ফলে। আসুন জেনে নিই আমড়ার পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিশদে।
আমড়ার পুষ্টি গুণাগুণ
আমড়া পুষ্টিতে ভরপুর একটি ফল। এতে এমন অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা প্রায় তিনটি আপেলের পুষ্টির সমান। আমড়াতে আপেলের তুলনায় বেশি প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন রয়েছে। ১০০ গ্রাম আমড়ায় পাওয়া যায় ১.১ গ্রাম প্রোটিন, ১৫ গ্রাম শ্বেতসার, শূন্য দশমিক ১০ গ্রাম স্নেহ জাতীয় পদার্থ এবং ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন। এছাড়াও ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে ০.২৮ মিলিগ্রাম থায়ামিন, ০.০৪ মিলিগ্রাম রিবোফ্লাভিন এবং ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এছাড়া ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৩.৯ মিলিগ্রাম লৌহ পাওয়া যায়। আমড়ার খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালোরি এবং এতে খনিজ পদার্থ বা মিনারেলসের পরিমাণ ০.৬ গ্রাম।
আমড়ার বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ
আমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কোলাজেন উৎপাদনে সহায়ক। কোলাজেন স্কিন, লিগামেন্ট, টেন্ডন এবং কার্টিলেজকে স্বাস্থ্যবান রাখতে সাহায্য করে। দৈনিক একটি আমড়া খেলে ভিটামিন সি এর চাহিদার ৩৯%-৪৯% পূরণ হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় ৪৬.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে যা শরীরকে ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে।
২. বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ
আমড়াতে দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে যা পাকস্থলীর ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এটি বদহজম, পেট ফাঁপা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে কার্যকর।
৩. সর্দি কাশি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ থেকে রক্ষা
আমড়া বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং সর্দি, কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। ফলে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে সহজেই বেঁচে থাকা যায়।
৪. মুখে রুচি এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি
আমড়ায় কিছু ভেষজ গুণ রয়েছে যা পিত্তনাশক এবং কফনাশক হিসেবে কাজ করে। এটি মুখে রুচি ফিরিয়ে আনে এবং ক্ষুধা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৫. ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ
ক্যালসিয়ামের অভাব হলে হাড়ের রোগ এবং মাংস পেশীর খিঁচুনি সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমড়া ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস এবং দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে সহায়ক।
৬. আয়রনের অভাব পূরণ
প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় ২.৮ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে যা দৈনিক আয়রনের চাহিদার ১৫.৫%-৩৫% পূরণ করে। আয়রন লাল রক্ত কণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং শরীরের সার্বিক কাজ সম্পন্ন করতে সহায়তা করে।
৭. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
আমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় মাত্র ২৯ ক্যালরি থাকে। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক।
৮. হৃদরোগ প্রতিহত
আমড়ায় প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা সার্বিক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে এটি হৃদরোগ প্রতিহত করতে সহায়ক।
৯. অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দূর
আমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকার কারণে এটি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক রাখতে সহায়তা করে এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে কার্যকর।
১০. ত্বক সুস্থ রাখা
আমড়ায় প্রচুর ভিটামিন সি থাকার কারণে এটি ত্বক, চুল এবং নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। ত্বকের ব্রণ কমাতে, ত্বক উজ্জ্বল রাখতে আমড়া অত্যন্ত উপকারী।
উপসংহার
আমড়া আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর ফল। এটি শুধুমাত্র সুস্বাদু নয়, বরং এর উপকারিতার শেষ নেই। তাই আপনিও আপনার বাড়ীর আশেপাশে আমড়া ফলের চারা রোপন করে পরিবারের সবার পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারেন। নিয়মিত আমড়া খেলে আপনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারেন এবং বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় আমড়া যুক্ত করে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।