তেঁতুল, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিচিত একটি টক ফল। এটি শুধু আমাদের খাবারের স্বাদ বাড়ায় না, বরং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ্যতার জন্য অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ। তেঁতুল বসন্তকালের ফল হলেও সারা বছরই এটি পাওয়া যায়। এতে রয়েছে প্রচুর ভেষজ ও পুষ্টিগুণ, যা আমাদের শরীরের নানা প্রয়োজনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
তেঁতুলের পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেঁতুলে রয়েছে:
- খনিজ পদার্থ: ২.৯ গ্রাম
- খাদ্য-শক্তি: ২৮৩ কিলোক্যালোরি
- আমিষ: ৩.১ গ্রাম
- চর্বি: ০.১ গ্রাম
- শর্করা: ৬৬.৪ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম: ১৭০ মিলিগ্রাম
- আয়রন: ১০.৯ মিলিগ্রাম
- ক্যারোটিন: ৬০ মাইক্রোগ্রাম
- ভিটামিন সি: ৩ মিলিগ্রাম
তেঁতুল খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা
হজম শক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
তেঁতুলে থাকা টার্টারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, এবং পটাশিয়াম কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে তেঁতুলের ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া পেটের ব্যথা সারাতে তেঁতুল গাছের ছাল এবং শিকড়ও ব্যবহার করা হয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে
তেঁতুলে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ফাইবার যা হজম ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়া এতে থাকা hydroxycitric acid খিদে কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, তেঁতুলে উপস্থিত flavonoids এবং polyphenols ওজন কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে
তেঁতুলে থাকা ফ্ল্যাভরনয়েড উপাদান খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড জমতে দেয় না এবং উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম রক্ত চাপ কমাতে সহায়ক।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে
তেঁতুল বীজে alpha-amylase নামক একটি এনজাইম থাকে যা রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে তেঁতুলের বীজের ব্যবহার খুবই কার্যকরী।
লিভার সুরক্ষিত রাখতে
তেঁতুল লিভার বা যকৃতের জন্যও উপকারী। নিয়মিত তেঁতুল পাতা ব্যবহার করলে ক্ষতিগ্রস্থ লিভার বা যকৃৎ অনেকটাই সুস্থ হয়।
সর্দি কাশি দূর করতে
তেঁতুলে থাকা antihistaminic প্রপার্টি শরীরে অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
আলসার রোধ করতে
তেঁতুলের বীজের গুঁড়ো নিয়মিত খেলে পেপটিক আলসার সেরে যায়। এতে উপস্থিত পলিফেনলিক কম্পাউন্ড আলসার প্রতিরোধে সহায়ক।
ত্বক উজ্জ্বল ও রোগমুক্ত রাখতে
তেঁতুল ক্ষতিকারক আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। ব্রণ সমস্যা দূর করতেও তেঁতুল উপকারী। এতে থাকা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ত্বকের মৃত চামড়া কোষ অপসারণে সাহায্য করে, যা ত্বককে উজ্জ্বল ও রোগমুক্ত রাখে।
আঘাতজনিত ক্ষত সারাতে
তেঁতুল গাছের পাতা এবং ছালে অ্যান্টি-সেপটিক এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ রয়েছে যা আঘাতজনিত ক্ষত সারাতে কার্যকর।
ক্যান্সার প্রতিরোধে
তেঁতুলে অধিক মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা কিডনি ফেলিওর এবং কিডনি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।
উপসংহার
তেঁতুল, প্রচণ্ড টক স্বাদের এই ফলটি অনেকেরই প্রিয় খাবার। তেঁতুলের উচ্চ পুষ্টিগুণ এবং বহুমুখী স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে এটি আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকা উচিত। হৃদরোগ, ডায়বেটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শুরু করে লিভার সুরক্ষা, ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ পর্যন্ত তেঁতুলের উপকারিতা অপরিসীম। তাই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত পরিমিত মাত্রায় তেঁতুল খাওয়া উচিত।