শিশুরা প্রাকৃতিকভাবেই খাবারের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে বেশ চঞ্চল হয়ে থাকে। কখনও তারা নির্দ্বিধায় খাবার গ্রহণ করে, আবার কখনও তা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে। মা-বাবারা সন্তানের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন, কারণ তারা মনে করেন সঠিক পুষ্টির অভাবে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই শিশুকে খাবারের প্রতি আগ্রহী করতে কিছু কার্যকরী কৌশল প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
১. স্বয়ংক্রিয়ভাবে খাওয়ার অভ্যাস তৈরি
শিশুকে যখন বসতে শেখান, তখনই তাকে নিজে নিজে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করান। এটি তাকে খাবারের রং, ধরন ও গন্ধ সম্পর্কে সচেতন করে তুলবে এবং বিভিন্ন খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়াবে।
২. জোরাজুরি বা মারধর নয়
শিশুরা খেলাধুলা কমালে তাদের খাবারের চাহিদা কমে যায়। তাই জোর করে বা বকা দিয়ে খাওয়ানো উচিত নয়। উৎসাহ দিয়ে, প্রশংসা করে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
৩. সময়মতো নাস্তা
শিশুর সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও রাতের খাবারের মাঝে দুবার হালকা নাস্তা দিন। ভারী নাস্তা বা মূল খাবারের অল্প আগে কোনো খাবার দিলে শিশুর ক্ষুধাভাব কমে যায়, যা এড়াতে নাস্তা ও মূল খাবারের মাঝে পর্যাপ্ত সময় রাখুন।
৪. নাস্তা ও মূল খাবারের পরিমাণে পার্থক্য
নাস্তা ও মূল খাবারের পরিমাণে পার্থক্য রাখা গুরুত্বপূর্ণ। নাস্তা মূল খাবারের চেয়ে কম পরিমাণে দিন, যাতে শিশুর শরীরে ক্ষুধামন্দা তৈরি না হয়।
৫. শিশুর পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া
শিশুর পছন্দকে গুরুত্ব দিন এবং খাবারে বৈচিত্র্য আনুন। জিজ্ঞাসা করুন কোন খাবার সে পছন্দ করে এবং তার পছন্দ অনুযায়ী খাবার দেওয়ার চেষ্টা করুন। একই ধরনের খাবার বারবার না দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার দিন।
৬. চকলেট ও জুসের কম ব্যবহার
শিশুকে চকলেট ও জুস কম খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। ফলের রসের বদলে আস্ত ফল খাওয়ান। বেশি তরল খেলে শিশুর পেট তাড়াতাড়ি ভরে যায় এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয় না। তাই চকলেট ও জুস জাতীয় খাবার থেকে তাকে নিরুৎসাহিত করুন।
৭. নির্দিষ্ট সময়মতো খাওয়ার অভ্যাস
শিশুকে আধাঘণ্টার বেশি সময় ধরে খাওয়ালে তার মধ্যে অরুচি তৈরি হতে পারে। তাই চেষ্টা করুন সে যেন ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে খাওয়া শেষ করে। যদি সে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাবার শেষ করতে না পারে, তাহলে জোর করবেন না।
৮. টেলিভিশন দেখতে দেখতে খাওয়া বন্ধ
শিশুকে টেলিভিশন দেখতে দেখতে খাওয়ানোর অভ্যাস বন্ধ করুন। পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাওয়ার সময় শিশুকে সঙ্গে নিন। অন্যদের খেতে দেখে তার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
৯. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও শারীরিক কার্যকলাপ
শিশুর পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং শারীরিক কার্যকলাপ নিশ্চিত করুন। নিয়মিত খেলাধুলা এবং বিশ্রামের ফলে তার শরীরে খাবারের চাহিদা বাড়বে এবং সে খাবারের প্রতি আগ্রহী হবে।
১০. স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্সের অভ্যাস
স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স যেমন- ফল, বাদাম, দই ইত্যাদি শিশুর জন্য ভালো হতে পারে।
১১. খাবারের পরিবেশন কৌশল
খাবারকে আকর্ষণীয়ভাবে পরিবেশন করুন। বিভিন্ন রঙের শাকসবজি, ফল এবং বিভিন্ন আকৃতির খাবার পরিবেশন করলে শিশুরা খাবারের প্রতি আগ্রহী হয়।
১২. শিশুর ওজন এবং পুষ্টি পর্যবেক্ষণ
শিশুর গড় ওজন এবং তার শরীরে পুষ্টির সরবরাহ যথেষ্ট কি না তা পর্যবেক্ষণ করুন। খেয়াল রাখুন যে, আপনার শিশু হাসিখুশি, সজীব এবং ঘনঘন অসুস্থ না হয়।
১৩. খাবার নিয়ে মজার গল্প ও গেম
খাবার নিয়ে মজার গল্প বলুন বা গেম খেলুন। এটি শিশুর খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়াবে এবং খাওয়ার সময়কে মজাদার করে তুলবে।
১৪. পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব শেখানো
শিশুকে পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব বোঝান। তাকে জানাতে পারেন যে, ভালো খাবার খেলে সে শক্তিশালী এবং সুস্থ থাকবে।
১৫. খাওয়ার সময় শিশুর মনোযোগ দেওয়া
খাওয়ার সময় শিশুর দিকে মনোযোগ দিন এবং তার প্রশংসা করুন। এটি তাকে খাওয়ার প্রতি উৎসাহী করবে।
শিশুরা প্রাকৃতিকভাবে নানা ধরনের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বেড়ে ওঠে। তাই তাদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য ধৈর্য্য ধরুন এবং উপযুক্ত দিক নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
শিশুর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করা মা-বাবার প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে একটি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে আপনার শিশু সুস্থ, সবল এবং সুখী থাকবে, যা তার ভবিষ্যৎ জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।