শীতের আগমনের সাথে সাথে বাজারে ধনেপাতার ব্যাপক সমাগম শুরু হয়েছে। এন্টি-অক্সিডেন্ট, এসেনশিয়াল অয়েল, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ এই সবজিটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। চলুন ধনেপাতার পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্যগত সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।
ধনেপাতার পুষ্টিগুণ
ধনেপাতা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। প্রতি ১০০ গ্রাম ধনেপাতায় রয়েছে:
- জলীয় অংশ: ৮৬.৩ গ্রাম
- খনিজ পদার্থ: ২.৩ গ্রাম
- আশঁ: ১.২ গ্রাম
- খাদ্যশক্তি: ৪৪ কিলোক্যালোরি
- আমিষ: ৩.৩ গ্রাম
- চর্বি: ০.৬ গ্রাম
- শর্করা: ৬.৩ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম: ১৮৪ মিলিগ্রাম
- আয়রণ: ১৮.৫ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ: ৬৯১৮ মাইক্রোগ্রাম
- ভিটামিন বি ১০: ০.০৫ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি: ১৩৫ মিলিগ্রাম
এগুলো ছাড়াও ধনেপাতায় আছে প্রচুর এসেনশিয়াল অয়েল এবং ছয় ধরনের অ্যাসিড যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
ধনেপাতার স্বাস্থ্যগত সুবিধা
১. রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ
ধনেপাতায় প্রচুর আয়রণ রয়েছে যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। আয়রণ শরীরের হিমোগ্লোবিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যা অক্সিজেন পরিবহন করে এবং শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় এবং ক্লান্তি কমায়। এছাড়া আয়রণ হাড় মজবুত রাখতে সহায়তা করে।
২. দৃষ্টিশক্তি উন্নত করা
ধনেপাতায় প্রচুর ভিটামিন এ রয়েছে যা চোখের রেটিনার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে এবং রাতে ভালো দেখার ক্ষমতা বাড়ায়। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান বয়সজনিত কারণে চোখের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস কমাতে সহায়ক।
৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
নিয়মিত ধনেপাতা খেলে এটি অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়ায়, ফলে রক্তে শর্করার শোষণ বৃদ্ধি পায়। ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত ধনেপাতা খেলে তাদের শরীরে শর্করার পরিমাণ হ্রাস পায় এবং বিপাক সঞ্চালন সঠিক থাকে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
ধনেপাতায় প্রচুর ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন এ শ্বাসনালী, চোখ, নাক, মুখ এবং গলায় ভাইরাসের ইনফেকশন প্রতিরোধ করে এবং ভিটামিন সি সাদা রক্ত কোষের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়।
৫. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
ধনেপাতায় উচ্চমাত্রার কোলিনার্জিক যৌগ এবং ক্যালসিয়াম অ্যান্টাগোনিস্টস রয়েছে যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এই পাতার শক্তিশালী তেজস্ক্রিয়তা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনে।
৬. রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
ধনেপাতায় সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম থাকায় এটি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সক্ষম। এতে থাকা বিভিন্ন অ্যাসিড যেমন লিনোল্যাট অ্যাসিড, ওলিঅ্যাট অ্যাসিড, পমিট্যাট অ্যাসিড এবং স্টিয়ার্যাট এসিড খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৭. হজমে সহায়তা
ধনেপাতা খেলে শরীরে হজমে সহায়ক এনজাইম উৎপন্ন হয় যা খাবার দ্রুত হজম করতে সহায়তা করে। এছাড়া বমিভাব এবং বদহজম দূর করতেও এটি কার্যকর।
৮. ক্যান্সার প্রতিরোধ
ধনেপাতায় অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান রয়েছে যা শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে থাকা বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন ই, ক্যাফিক অ্যাসিড, ফেরুলিক, কুয়ারসেটিন এবং ক্যাম্পারফোল্ড ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী।
ধনেপাতার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যদিও ধনেপাতা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবুও অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এতে যকৃতের সমস্যা, ডায়রিয়া এবং অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। এছাড়া অনেকের ক্ষেত্রে সূর্যরশ্মির সংবেদনশীলতা দেখা দিতে পারে। তাই ধনেপাতা খাওয়ার পরিমাণ অবশ্যই সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
শেষকথা
ধনেপাতা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং উপকারী সবজি যা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় থাকা উচিত। এর পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্যগত সুবিধা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়ক। তবে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। নিয়মিত এবং সঠিক পরিমাণে ধনেপাতা খেয়ে আমরা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারি।