বাংলাদেশের বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। এই পেশাগুলোতে কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই; ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনো সময় ও যেকোনো স্থান থেকে কাজ করা সম্ভব।
ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিংয়ে সফল হতে হলে নির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন অপরিহার্য। এই খাতের পরিসর অত্যন্ত ব্যাপক। ডাটা এন্ট্রি থেকে শুরু করে ফটো এডিটিং, ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, কোডিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং আর্টিকেল রাইটিং, ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট, টিচিং ট্রেনিং, একাউন্ট ফাইন্যান্স ইত্যাদি কাজ এই খাতের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিংয়ে ক্যারিয়ার গাইডলাইন এবং এর সম্ভাবনাগুলো নিয়ে আমাদের এই আর্টিকেলে বিশদ আলোচনা করা হবে। চলুন, দেরি না করে মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক।
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ফ্রিল্যান্সিং একটি পেশা যেখানে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে বিভিন্ন ধরণের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এটি সাধারণ চাকরির মতো হলেও, এর মূল ভিন্নতা হলো এখানে আপনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। অর্থাৎ, আপনার কাজ করার সময় ও স্থান নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
ফ্রিল্যান্সিং-এর সুবিধা হলো, আপনার যখন কাজ করতে ইচ্ছা করবে না, তখন আপনি বিরতি নিতে পারবেন। কোনো নির্দিষ্ট অফিস টাইম বা অফিসে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন নেই। এছাড়া এখানে আপনার নির্দিষ্ট কোনো নিয়োগকর্তা (Employer) নেই। যখন যে ক্লায়েন্টের কাজ নিবেন, তখন সেই ক্লায়েন্টই আপনার নিয়োগকর্তা হবে।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য ভিন্নতা হলো কাজের স্থান। ফ্রিল্যান্সিং-এর নির্দিষ্ট কোনো অফিস নেই। মূলত আপনার বাড়িই হবে আপনার অফিস। সেখান থেকেই আপনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং-এর ক্ষেত্রে, আপনার কাজের দক্ষতা থাকলে আপনি খুব সহজেই সরকারি বা বেসরকারি অনেক চাকরির তুলনায় অনেক বেশি টাকা আয় করতে পারবেন। আমাদের দেশে দক্ষতার কদর হয় না সেভাবে; কিন্তু বিদেশে যেকোনো কাজের মূল্য দেওয়া হয়। ফলে, বিদেশি ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করে আপনি বাংলাদেশের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি টাকা আয় করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং-এর কাজের পরিসরও অত্যন্ত ব্যাপক। এখানে ডাটা এন্ট্রি থেকে শুরু করে ফটো এডিটিং, ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, কোডিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং আর্টিকেল রাইটিং, ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট, টিচিং ট্রেনিং, একাউন্ট ফাইন্যান্স-এর মতো অসংখ্য কাজের সুযোগ রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করলে, আপনি অনলাইনে একটি সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার
ফ্রিল্যান্সিং সহজ কাজ নয়, তবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের আয়ও কম নয়। সফলতার পেছনে প্রচুর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের গল্প থাকে যা অন্যদের কাছে প্রেরণা হতে পারে। একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের জীবন কাহিনী শুনলে আপনি তাকে ‘লিজেন্ড’ খেতাব দিতে পারেন। কারণ সফলতার পেছনে থাকে রাতের পর রাত পরিশ্রম, ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখা, বই পড়া, কাজ প্র্যাক্টিস করা এবং ধৈর্য ধরে দক্ষতা অর্জন।
উদাহরণ হিসেবে ধরুন:
আপনি ধরুন বিবিএ পড়ছেন, ফিন্যান্স নিয়ে। পড়াশোনা শেষ করতে সময় লাগে প্রায় ২০ বছর। এরপর একটি ফ্রেশার জবের জন্য এপ্লাই করেন, যার বেতন ১৫ হাজার টাকা। অনেকবার রিজেক্ট হওয়ার পর শেষমেশ একটি জব পান। এই জবের জন্য ২০ বছর পড়াশোনা করেছেন এবং একই শহরের আরও অনেকের সাথে প্রতিযোগিতা করে চাকরি পেয়েছেন।
এবার ভাবুন ফ্রিল্যান্সিং এর কথা। ধরুন, আমেরিকার একটি কোম্পানি একটি প্রজেক্ট আউটসোর্স করেছে, যার মেয়াদ ২ সপ্তাহ এবং পেমেন্ট ১ হাজার ডলার। এই প্রজেক্টে সারা বিশ্বের ফ্রিল্যান্সাররা এপ্লাই করছেন। প্রতিযোগিতার লেভেল এখন কেমন? সারা বিশ্বের সেরা প্রফেশনালদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে আপনাকে।
এই লেভেলে প্রতিযোগিতার জন্য কি ২ মাসের কোর্স করে দক্ষ হওয়া সম্ভব? এটি সম্ভব নয়। ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে মাসে লাখ টাকা আয় করতে হলে অন্তত এক বছর সময় নিয়ে শেখার উপর জোর দিতে হবে।
বাংলাদেশে অনেক ফ্রিল্যান্সার মাসে ২ লাখ টাকা বা তারও বেশি আয় করেন, কিন্তু তারা ২ মাসে কোর্স করে এত দূর আসেননি। তারা অন্তত এক বছর সময় নিয়ে শেখার উপর জোর দিয়েছেন এবং ধৈর্য ধরে কাজ করেছেন।
যেখানে ১৫ হাজার টাকার জবের জন্য ২০ বছর পড়াশোনা করতে পারেন, সেখানে মাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করতে এবং বিশ্বের সেরা প্রফেশনালদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে ১-২ বছর সময় দিয়ে কাজ শিখবেন না?
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়তে সময়, অধ্যবসায় ও ধৈর্য্য দরকার। আপনি যদি সত্যিই এই পথে সফল হতে চান, তাহলে কাজ শেখা ও দক্ষতা অর্জনে যথেষ্ট সময় দিন এবং পরিশ্রম করুন।
ফ্রিল্যান্সিং করতে কী কী দক্ষতা প্রয়োজন?
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে বিশেষ কোনো দক্ষতা বা যোগ্যতা প্রয়োজন হয় কিনা, এটি অনেকেই জানতে চান। ফ্রিল্যান্সিংয়ে সাফল্য অর্জনের মূল চাবিকাঠি হলো ইচ্ছাশক্তি এবং ধৈর্য। আপনার মধ্যে যদি এই দুটি গুণ থাকে, তাহলে আপনি ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে পারবেন।
তবে এই দুই গুণ ছাড়াও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যা আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে সাহায্য করবে। প্রথমত, একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করা খুবই জরুরি। যেমন, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, কন্টেন্ট রাইটিং, বা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষতা বাড়ানো। এর পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে আপনাকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা অর্জন করতে হবে:
- যোগাযোগের দক্ষতা: ক্লায়েন্টের সাথে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে পারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজের প্রয়োজনীয়তা এবং ক্লায়েন্টের প্রত্যাশা বা ক্লায়েন্ট আপনার কাছে কি চায় সেটা বোঝা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা, আপনার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
- ইংরেজি ভাষার দক্ষতা: ফ্রিল্যান্সিংয়ের বেশিরভাগ কাজই আন্তর্জাতিক, তাই ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু ক্লায়েন্টদের সাথে কার্যকর যোগাযোগ রক্ষা করতে সাহায্য করে না, বরং কাজের চাহিদা ও নির্দেশনাগুলি সঠিকভাবে বুঝতেও সহায়তা করে। যদি আপনি ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হন এবং একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নিবিড়ভাবে কাজ করেন, তাহলে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতা অর্জন করতে পারবেন। সুতরাং, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা এবং একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষতা থাকলে এবং সেই সাথে প্রচেষ্টা ও ধৈর্য্য ধরে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করলে, সফলতা অর্জন আপনার জন্য বেশি দূরে নয়।
- ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান: ইন্টারনেট সম্পর্কিত ভালো ধারণা থাকা দরকার। গুগল, ইউটিউব এবং অন্যান্য প্লাটফর্ম থেকে বিভিন্ন রিসোর্স খুঁজে বের করার দক্ষতা আপনার কাজকে আরো সহজ করবে এবং আপনাকে দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে সহায়তা করবে।
- নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষতা: আপনি যে ক্ষেত্রেই কাজ করতে চান, সেই ক্ষেত্রের উপর দক্ষতা অর্জন করা খুব জরুরি। এটি হতে পারে ডাটা এন্ট্রি, ফটো এডিটিং, ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, কোডিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং আর্টিকেল রাইটিং, ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট, টিচিং ট্রেনিং অথবা একাউন্ট ফাইন্যান্স ইত্যাদি।
- টাইম ম্যানেজমেন্ট: ফ্রিল্যান্সিংয়ে নিজের কাজের সময়সূচি নিজেই ঠিক করতে হয়। প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে কত দিন সময় লাগবে, একটা কাজে কয়বার রিভিশন দিবেন ইত্যাদি। তাই টাইম ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা থাকা প্রয়োজন যাতে আপনি ডেডলাইন অনুযায়ী সময়মত কাজ শেষ করতে পারেন।
এই গুণাবলী ও দক্ষতাগুলো থাকলে, আপনি ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে পারবেন এবং এই দক্ষতাগুলো আপনার জন্য একটি সফল ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করবে।
কিভাবে শুরু করবেন ফ্রিল্যান্সিং?
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার প্রশ্ন অনেকের মনেই জাগে। ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করতে হলে প্রথমেই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আপনার যে কাজে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ, সেটি বেছে নিন। এতে আপনি কাজ করতে আনন্দ পাবেন এবং সফল হতে পারবেন।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনে আগ্রহী হন, তবে এটি বেছে নিতে পারেন। গ্রাফিক্স ডিজাইন একটি ক্রিয়েটিভ কাজ এবং সবার পক্ষে এটি করা সম্ভব নয়। এই ক্ষেত্রে কাজ শুরু করার আগে দেখুন, ভাবুন, আপনি এই কাজে কতটা পারদর্শী এবং আগ্রহী। যদি মনে হয় আপনি এটির জন্য উপযুক্ত, তাহলে ফটো এডিটিং, ভিডিও এডিটিং, ব্যানার, কভার ডিজাইন, লিফলেট, পোস্টার, লোগো, এনিমেশন, টি-শার্ট ডিজাইনের মতো বিভিন্ন বিষয় রয়েছে, আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সেটা নিয়ে শুরু করতে পারেন।
এগুলি শিখতে এবং আরও বেশি দক্ষ হতে আপনি গুগল বা ইউটিউব থেকে আপনি ফ্রি রিসোর্স এর সাহায্য নিতে পারেন। এছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন পেইড কোর্সও করতে পারেন। সবকিছুই নির্ভর করবে আপনার ইচ্ছার উপর। যদিও ইউটিউবে এখন অনেক ভাল ভাল কোর্স ফ্রিতে পাওয়া যায়। আপনার মর্জি।
যাইহোক, কাজ শেখার পর, এবার কাজ করার পালা। প্রথমেই আপনাকে একটি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। বর্তমানে অনেক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যেমন: Fiverr, Freelancer, Upwork, Kwork ইত্যাদি। অ্যাকাউন্ট খোলার পর সেটিকে সুন্দর করে সাজাতে হবে। যেমন একটি দোকানে পণ্য সাজানো থাকে, তেমনই আপনার কাজগুলো পোর্টফোলিও আকারে সাজিয়ে রাখতে হবে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে। এজন্য আপনি টপ সেলারদের গিগ বা সার্ভিস থেকে আইডিয়া নিতে পারেন। তারা কিভাবে তাদের সার্ভিস সাজিয়েছে। এরপর প্রথম কাজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই প্রথম ধাপটি একটু কঠিন হয়। ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রেও বিষয়টি ভিন্ন নয়। প্রথম কাজটি পাওয়া একটু কষ্টসাধ্য হতে পারে। তবে পরিচিত কারো রেফারেন্সের মাধ্যমে কাজ পাওয়া সহজ হয়। এজন্য পরিচিত কোনো ফ্রিল্যান্সারের সাহায্য নিতে পারেন।
বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের একটি বড় কমিউনিটি আছে। সেখান থেকেও সাহায্য নিতে পারেন। প্রথম কাজ পেয়ে গেলে, পরবর্তীতে আরও কাজ পাবেন এবং এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে। তবে এর জন্য কাজের গুণগত মান বজায় রাখতে হবে এবং ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার কিছু ধাপ
আপনার দক্ষতা নির্ধারণ করুন: ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য প্রথমে আপনার কোন কাজগুলোতে দক্ষতা আছে তা নির্ধারণ করুন। আপনার যে কাজগুলোতে ভালো লাগা এবং দক্ষতা আছে সেগুলো বেছে নিন। উদাহরণ হিসেবে ডাটা এন্ট্রি, আর্টিকেল লেখা, গ্রাফিক্স ডিজাইন, কপিরাইটিং, মার্কেটিং, টাইপিং, প্রেজেন্টেশন তৈরি এবং ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্টের মতো কাজগুলো হতে পারে।
ফ্রিল্যান্সিং খাত সম্পর্কে জানুন: প্রথমে ফ্রিল্যান্সিং খাতে কোন কোন ফিল্ড আছে তা জানুন। বিভিন্ন ধরণের কাজের সুযোগ রয়েছে যেমন গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, কনটেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি।
নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড, স্কিল এবং আগ্রহ মূল্যায়ন করুন: আপনার বর্তমান ব্যাকগ্রাউন্ড, স্কিল এবং আগ্রহের সাথে কোন ফিল্ড মিলে যায় তা ভেবে দেখুন।
মার্কেটপ্লেস পর্যালোচনা করুন: বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে ঐ ফিল্ডগুলোর পোস্ট করা জব এবং টপ সেলারদের সার্ভিসগুলো ঘেঁটে দেখুন। বুঝার চেষ্টা করুন এই ধরণের কাজে কী কী স্কিল লাগে।
মার্কেটপ্লেসে প্রোফাইল তৈরি করুন: আপনার স্কিল অনুযায়ী বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যেমন Upwork, Fiverr, Freelancer ইত্যাদিতে প্রোফাইল তৈরি করুন। প্রোফাইলটি আকর্ষণীয় করে সাজান এবং আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ভালোভাবে উল্লেখ করুন।
পোর্টফোলিও তৈরি করুন: আপনার কাজের নমুনা সংবলিত একটি পোর্টফোলিও তৈরি করুন। এটি ক্লায়েন্টদের কাছে আপনার দক্ষতার প্রমাণ হবে এবং কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াবে।
স্কিল শেখার পরিকল্পনা করুন: যে স্কিলগুলো আপনার দরকার, সেগুলো শেখার কথা ভাবুন। অনলাইনেই অনেক রিসোর্স পাওয়া যায়, যেগুলো দিয়ে আপনি নিজে নিজেই শিখতে পারেন। বাংলাদেশের প্রথম সারির অনেক ফ্রিল্যান্সারই নিজে নিজে শিখে সফল হয়েছেন।
পরামর্শ গ্রহণ করুন: স্কিল অর্জনের পর, কীভাবে মাঠে নামা যায় তা জানতে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। তবে, প্রথমেই কাউকে ‘ভাই, অনলাইনে ইনকাম করার সহজ পথ বলেন’ বলে বিরক্ত করবেন না।
প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি নিন: ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে প্রচুর বিড আসে, তাই প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। আপনি যে কাজ করতে চান, সেগুলোর জন্য নিয়মিত বিড করতে হবে এবং নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। বিশেষত সহজ কাজগুলোতে যেমন ডাটা এন্ট্রি এবং টাইপিং-এর ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বেশি।
কঠিন কাজের চ্যালেঞ্জ নিন: তুলনামূলক কঠিন কাজ যেমন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, এবং ডিজিটাল মার্কেটিং-এ প্রতিযোগিতা কম হলেও, এ ধরনের কাজে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া যায়। এসব কাজ নিখুঁতভাবে করতে হলে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
ধৈর্য সহকারে চেষ্টা চালিয়ে যান: চেষ্টা করতে থাকুন। যদি প্রথমবার সফল না হন, ভুলগুলো শুধরে আবার চেষ্টা করুন। যে কাজে আপনাকে এক্সেপ্ট করেনি, সে কাজ নিজেই করুন। এতে প্র্যাকটিস হবে এবং পোর্টফোলিওও তৈরি হবে।
স্কিল ডেভেলপমেন্টে মনোযোগ দিন: ফ্রিল্যান্সিং করে কত আয় করা যায় তা না ভেবে, স্কিল ডেভেলপ করার দিকে মনোযোগ দিন। দক্ষতা অর্জন করলে আয় এমনিতেই আসবে।
ধৈর্য ধরুন: ফ্রিল্যান্সিং একটি ধৈর্যের কাজ। প্রথমেই বড় আয় আশা না করে, ধৈর্য ধরে কাজ শিখতে এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করার এই ধাপগুলো অনুসরণ করলে, আপনি ধীরে ধীরে সফল হয়ে উঠতে পারবেন। কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ই আপনাকে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে তুলবে।
নতুনরা কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসতে পারে?
যদি আমরা ২০১০ সালের কথা ভাবি, তখন ফ্রিল্যান্সিং করা এবং সেই সংক্রান্ত কাজ শেখা ছিল বেশ কঠিন। সেই সময় খুব কম মানুষের ঘরেই কম্পিউটার ছিল। এখন, প্রযুক্তির উন্নতির ফলে প্রায় প্রতিটি ঘরে কম্পিউটার রয়েছে এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগও বেড়েছে। এই পরিবর্তন নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা অনেক সহজ করে তুলেছে।
বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সব ধরণের তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। গুগল বা ইউটিউবে কিছু সময় ব্যয় করলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। এছাড়া এখন ইউটিউবে অনেক প্রফেশনাল মানের ফ্রিল্যান্সিং কোর্স ফ্রি পাওয়া যায়। পেইড অনলাইন কোর্স এবং বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারও রয়েছে অনেকে শহরে, যেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে আপনি দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।
তবে, মনে রাখতে হবে যে ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি পেশা নয় যেখানে আপনি এক মাস কাজ করেই ভালো টাকা আয় করতে পারবেন। এখানে সফল হতে হলে আপনাকে ধৈর্য্য সহকারে কাজ করে যেতে হবে এবং লেগে থাকতে হবে। এই পথটা অনেকসময় দুর্গম ও কষ্টকর হতে পারে, তবে ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল থাকলে আপনি অবশ্যই সফল হবেন।
নতুনরা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে পারেন:
- একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বেছে নিন: আপনার আগ্রহ ও দক্ষতা অনুযায়ী একটি ক্ষেত্র বেছে নিন, যেমন গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, কনটেন্ট রাইটিং ইত্যাদি।
- প্রশিক্ষণ নিন: ইউটিউব, গুগল, অনলাইন কোর্স বা ট্রেনিং সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন।
- নেটওয়ার্ক তৈরি করুন: বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটিতে যোগ দিন। ফেসবুকে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের বড় কমিউনিটি রয়েছে যেখানে আপনি সাহায্য পেতে পারেন।
- ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে যোগ দিন: Fiverr, Upwork, Freelancer-এর মতো প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুলে কাজের সন্ধান করুন।
- ধৈর্য্য এবং মনোবল বজায় রাখুন: প্রথম দিকে কাজ পেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। ধৈর্য্য ধরে কাজ চালিয়ে যান এবং কাজের মান বজায় রাখুন।
এভাবেই, আপনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে একটি সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন। প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে এখন ফ্রিল্যান্সিংয়ে আগ্রহী যে কেউ সহজেই এই কাজ শুরু করতে পারেন।
কিভাবে শিখবেন ফ্রিল্যান্সিং?
অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং শেখার ক্ষেত্রে ভুল ধারণা পোষণ করেন। বিষয়টি একটি উদাহরণের মাধ্যমে বোঝানো যাক। ধরুন, আপনি একাডেমিক পড়াশোনা শেষে একটি ব্যাংকে ব্যাংকার হিসেবে যোগ দিলেন। আপনার বন্ধু একই সময় একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে চাকরি পেল। এখন, যদি বলা হয় আপনারা দু’জনেই চাকরিজীবী, কথাটি কি মিথ্যা হবে? না, মিথ্যা হবে না। আবার, যদি বলা হয় আপনি একজন ব্যাংকার আর আপনার বন্ধু একজন অ্যাকাউন্টেন্ট, তাও মিথ্যা হবে না।
উপরের দু’টি কথাই সত্য। পদবী ভিন্ন হলেও আপনারা দু’জনেই চাকরিজীবী। একইভাবে, ফ্রিল্যান্সিং জগতেও কেউ গ্রাফিক্স ডিজাইনার, কেউ ওয়েব ডিজাইনার, কেউবা ডিজিটাল মার্কেটার। প্রত্যেকের কাজ ভিন্ন হলেও সবাই ফ্রিল্যান্সার।
তাহলে, ফ্রিল্যান্সিং শেখার প্রসঙ্গে যদি প্রশ্ন করা হয়, “কিভাবে চাকরি করা শেখা যায়?” – এর সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই। একইভাবে, ফ্রিল্যান্সিং শেখার নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি নেই।
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে হলে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করলেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনে আগ্রহী হন, তবে সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিন এবং দক্ষ হন।
নিচে কয়েকটি ধাপ দেওয়া হলো, যেগুলো অনুসরণ করে আপনি ফ্রিল্যান্সিং শেখা শুরু করতে পারেন:
- একটি ক্ষেত্র বেছে নিন: আপনার আগ্রহ অনুযায়ী একটি ক্ষেত্র নির্বাচন করুন, যেমন গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, কনটেন্ট রাইটিং ইত্যাদি।
- প্রশিক্ষণ নিন: গুগল, ইউটিউব, এবং বিভিন্ন অনলাইন কোর্স থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন। অনলাইনে অনেক পেইড ও ফ্রি কোর্স রয়েছে যা আপনাকে দক্ষ হতে সাহায্য করবে।
- প্রাকটিস করুন: প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নিজে নিজে প্রচুর প্রাকটিস করুন। এতে আপনার দক্ষতা আরো উন্নত হবে।
- পোর্টফোলিও তৈরি করুন: আপনার কাজগুলো একটি পোর্টফোলিওতে সাজিয়ে রাখুন। এটি আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে পরিচিত করতে সহায়তা করবে।
- ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে যোগ দিন: Fiverr, Upwork, Freelancer-এর মতো প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুলুন এবং অন্যান্য টপ সেলারদের প্রোফাইল, সার্ভিস থেকে আইডিয়া নিন।
- নেটওয়ার্ক তৈরি করুন: বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটিতে যোগ দিয়ে অন্য ফ্রিল্যান্সারদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। এতে আপনি নতুন সুযোগ সম্পর্কে জানতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং শেখার মূল কথা হলো, আপনাকে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষ হতে হবে। তারপর সেই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে হবে। সফল হতে ধৈর্য্য এবং নিষ্ঠা প্রয়োজন।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কিভাবে কাজ পাবেন?
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজ পেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা জরুরি। প্রথমত, মনে রাখবেন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে অসংখ্য ফ্রিল্যান্সার প্রতিনিয়ত কাজের জন্য প্রতিযোগিতা করছেন। একজন ক্লায়েন্ট কেন আপনাকেই কাজটি দিবে?
এর জন্য আপনাকে কিছু বিষয়ে দক্ষ হতে হবে:
- চমৎকার যোগাযোগ দক্ষতা: ক্লায়েন্টের সাথে পরিষ্কার ও প্রফেশনাল যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে। ক্লায়েন্টের প্রশ্ন ও উদ্বেগ দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে সমাধান করতে পারলে আপনি তাদের আস্থা অর্জন করতে পারবেন।
- মানসম্পন্ন কাজ: আপনি যে কাজের জন্য ক্লায়েন্টের কাছ থেকে পেমেন্ট নিচ্ছেন, সেই কাজটি যথাসম্ভব ভালোভাবে সম্পন্ন করতে হবে। আপনার কাজের মানই আপনাকে অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের থেকে আলাদা করবে।
- সুসম্পর্ক বজায় রাখা: বায়ারের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করতে পারেন, তাহলে তারা বারবার আপনার কাছেই কাজ দিবে। এছাড়া, তারা অন্যদের কাছেও আপনাকে সুপারিশ করতে পারেন।
- পোর্টফোলিও তৈরি করা: একটি চমৎকার পোর্টফোলিও তৈরি করুন যেখানে আপনার সেরা কাজগুলো প্রদর্শিত হবে। এটি ক্লায়েন্টদের আপনার দক্ষতা সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা দেবে।
- পেশাগত প্রোফাইল: আপনার প্রোফাইলটি এমনভাবে সাজান যাতে এটি পেশাদার দেখায় এবং সেখানে আপনার কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরুন। প্রোফাইল ছবি, বায়ো, এবং কাজের উদাহরণগুলো ভালভাবে উপস্থাপন করুন।
- নেটওয়ার্কিং: ফ্রিল্যান্সার কমিউনিটিতে সক্রিয় থাকুন এবং অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের সাথে যোগাযোগ করুন এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখুন। এটি আপনাকে নতুন সুযোগ ও ধারণা পেতে সাহায্য করবে।
যদি আপনি এই বিষয়গুলো মেনে চলেন এবং ধারাবাহিকভাবে ভালো কাজ করেন, তাহলে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজ পাওয়া আপনার জন্য অনেক সহজ হবে। প্রতিটি ক্লায়েন্টের সাথে একটি স্থায়ী এবং সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন, যাতে আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার আরও বেশি সফল হয়।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস কী?
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস বা সাইটগুলো মূলত বায়ার এবং ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এই সাইটগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বায়াররা তাদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করানোর জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার খুঁজে থাকেন। মার্কেটপ্লেসগুলো একটি সুসংগঠিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সেবাটি প্রদান করে।
প্রথমে ক্লায়েন্টরা মার্কেটপ্লেসে এসে তাদের কাজের জন্য বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সারের বিড পর্যালোচনা করেন। একজন ফ্রিল্যান্সার তার বিডে উল্লেখ করেন যে তিনি কত সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করতে পারবেন এবং এর জন্য কত পারিশ্রমিক নিবেন। এরপর ক্লায়েন্ট সেরা বিডটি বেছে নেন এবং কাজটি প্রদান করেন। ফ্রিল্যান্সার কাজটি সম্পন্ন করার পর ক্লায়েন্ট বিভিন্ন উপায়ে অর্থ পরিশোধ করেন। তবে, মার্কেটপ্লেস থেকে আয়ের একটি অংশ সার্ভিস চার্জ হিসেবে কেটে রাখা হয় এবং বাকিটা ফ্রিল্যান্সারের একাউন্টে জমা হয়।
জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস
কিছু উল্লেখযোগ্য ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হলো:
- Fiverr
- Upwork
- Freelancer
- PeoplePerHour
- Guru
- Toptal
- 99designs
- Belancer
মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়ার পদ্ধতি
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ পেতে হলে একটি আকর্ষণীয় এবং পেশাদার প্রোফাইল তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার প্রোফাইলটি এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে এটি ক্লায়েন্টদের আকৃষ্ট করে। অনেক মার্কেটপ্রস ফ্রিল্যান্সারদের গিগ বা সার্ভিস পাবলিশ করার সুবিধা প্রধান করে। প্রোফাইল তৈরির ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:
- প্রোফাইল ছবি: প্রোফাইল পিকচার হিসেবে একটি ফরমাল ছবি ব্যবহার করুন, যা আপনার পেশাদারিত্ব প্রকাশ করবে।
- প্রো ফ্রিল্যান্স প্রোফাইল: আপনার দক্ষতা অনুযায়ী প্রোফাইলের টাইটেল, ট্যাগ এবং ডেসক্রিপশন লিখুন। যে বিষয়ে আপনি এক্সপার্ট, সে বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন এবং পূর্ববর্তী কাজের নমুনা যোগ করুন। যেমন, আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইনে দক্ষ হন, তবে আপনার আঁকা কিছু ছবির নমুনা প্রোফাইলে যুক্ত করুন। আপনি যত ফ্রিল্যান্স কাজ করেছেন তার স্ক্রিনশট এবং বিবরণ প্রোফাইলে যোগ করুন। সর্বপরি, আপনার প্রোফাইলটি এমনভাবে সাজান যেন একজন ক্রেতা দেখে আকৃষ্ট হয়।
- দক্ষতা মূল্যায়ন: Upwork বা Freelancer.com এর মতো সাইটগুলোতে ফ্রিল্যান্সিং স্কিল মেজারমেন্ট পরীক্ষা দেওয়া যায়। এই পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ করলে আপনার প্রোফাইলের মান বৃদ্ধি পাবে।
- ঘণ্টাপ্রতি রেট: আপনার প্রোফাইলে ঘণ্টাপ্রতি কাজের রেট উল্লেখ করুন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ ক্লায়েন্ট আপনার রেট দেখে সিদ্ধান্ত নেবে।
- নির্ভুল তথ্য প্রদান: একাউন্ট খোলার সময় সব তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করুন। আপনার নাম, এনআইডি এবং ব্যাংক একাউন্টের তথ্য যেন সব জায়গায় সঠিক ও একরকম থাকে।
সঠিকভাবে প্রোফাইল, গিগ বা সার্ভিস সাজালে এবং নিয়মিত বিড করলে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ পাওয়া সহজ হয়।
ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা
ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুবিধা অসংখ্য, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ
সময়ের স্বাধীনতা
ফ্রিল্যান্সিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আপনি নিজের সুবিধা অনুযায়ী কাজের সময় নির্ধারণ করতে পারেন। যদি আপনি এখন কাজ না করতে চান, তাহলে আপনাকে কেউ জোর করবে না। পুরোপুরি আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে কখন আপনি কাজ করবেন।
কাজের স্বাধীনতা
আপনি নিজের কাজ নিজেই বেছে নিতে পারবেন। যে কাজটি করতে আপনার ভালো লাগে, সেটি বেছে নিয়ে কাজ করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
নিজের বেতন নিজে ঠিক করা
ফ্রিল্যান্সিংয়ে আপনি নিজের পেমেন্ট রেট নিজেই নির্ধারণ করতে পারেন। প্রায় সব মার্কেটপ্লেসেই এই সুবিধা রয়েছে। আপনি যে বেতনে কাজ করতে চান, সেই অনুযায়ী কাজ পাবেন।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করার সুযোগ
ফ্রিল্যান্সিংয়ে আপনি একই সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করতে পারেন। বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার সুযোগও পাবেন। ক্লায়েন্ট বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করবে।
দলগত কাজের সুযোগ
এককভাবে কাজ করার পাশাপাশি, ফ্রিল্যান্সিংয়ে দলগতভাবে কাজ করার সুযোগও রয়েছে।
পড়ালেখার পাশাপাশি কাজের সুযোগ
এই পেশাটি ফুল টাইম বা পার্ট টাইম হিসেবে নিতে পারেন। তাই ছাত্র থাকা অবস্থায়ও বিনা ঝামেলায় এই কাজ করতে পারবেন।
নিজের মত কাজের পরিবেশ
ফ্রিল্যান্সিংয়ে আপনি নিজের ইচ্ছামতো ওয়ার্কস্টেশন তৈরি করতে পারবেন। নিজের কাজের জায়গা আপনি নিজেই ঠিক করবেন।
ফ্রিল্যান্সিং-এর অসুবিধা
ফ্রিল্যান্সিং করতে গিয়ে অনেক সুবিধা থাকলেও কিছু অসুবিধাও রয়েছে যা সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। এরমধ্যে স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু অসুবিধার কথা উল্লেখ করা হলো:
- প্রতিষ্ঠিত হতে সময় লাগে: ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে সময় এবং ধৈর্য দরকার। অনেকেই দীর্ঘ সময় ধৈর্য ধরে কাজ করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েন। এছাড়া এখানে কাজের নিরাপত্তা বা গ্যারান্টি থাকে না।
- মাসিক উপার্জনে অস্থিতিশীলতা: ফ্রিল্যান্সিংয়ের সবচেয়ে বড় অসুবিধাগুলোর মধ্যে একটি হলো, এখানে মাসিক উপার্জন সমান হয় না। এক মাসে হয়তো ২০টি অর্ডার পেয়ে ৫০০০ ডলার উপার্জন করা সম্ভব, কিন্তু পরের মাসে হয়তো মাত্র ৫টি অর্ডার পেয়ে ২০০ ডলার উপার্জন হবে।
- সামাজিক মর্যাদা: আমাদের দেশের মানুষ এখনও প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে, তাই অনেকেই ফ্রিল্যান্সারদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেন না। ফলে ফ্রিল্যান্সারদের সামাজিক মর্যাদা কম হতে পারে।
- অতিরিক্ত কাজের কারণে শারীরিক সমস্যা: দীর্ঘ সময় একই জায়গায় বসে কাজ করার ফলে কোমর, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা হতে পারে। অনেক ফ্রিল্যান্সার ঘুম থেকে উঠে কম্পিউটারে বসেন এবং ঘুমানোর আগ পর্যন্ত কাজ করেন, যার ফলে মাইগ্রেন এবং চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- একাকীত্ব এবং অবসাদ
সব কাজ বাসায় বসে করতে হয়, ফলে একাকীত্ব বোধ হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে অবসাদগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। - ঘুমের সমস্যা
ক্লায়েন্টদের সময়ের সাথে মিলিয়ে কাজ করার ফলে অনেক ফ্রিল্যান্সার ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। আমাদের দেশে যখন রাত, ক্লায়েন্টদের দেশে তখন দিন থাকায় সময়ের পার্থক্যের জন্য ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
ফ্রিল্যান্সিং কি সবাই করতে পারে?
ফ্রিল্যান্সিং সবার জন্য নয়। এটি তাদের জন্য যারা:
- অতিরিক্ত লোভ করেন না।
- কাজ শেখার ধৈর্য রাখেন।
- আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার মত যোগাযোগ দক্ষতা রাখেন।
- শর্টকাটে টাকা আয় করতে চান না।
- জীবনে কিছু করার প্রবল ইচ্ছে রাখেন।
- সৎ পথে জীবিকা নির্বাহ করতে চান।
- শেখার প্রবণতা রাখেন।
যাদের এ পথে না আসা ভালো
ফ্রিল্যান্সিং তাদের জন্য নয় যারা:
- সবসময় চিন্তা করেন ফ্রিল্যান্সিং করে কত আয় করা যায়।
- সহজে আয় করার পথ খুঁজছেন।
- চাকরি বা অন্য পেশার পাশাপাশি সাইড ইনকাম হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং ভাবছেন।
- শেখা শুরুর ১৫ দিন থেকে ১ মাসের মধ্যেই অনেক টাকা আয় করবেন বলে মনে করছেন।
- ফ্রিল্যান্সিং ট্রেইনিং সেন্টারের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী হয়েছেন।
- ফ্রিল্যান্সিংকে খুব সহজ ভাবেন।
ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কিছু ভুল ধারণা
ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা হলো:
- ট্রেইনিং সেন্টারে গেলেই সফল হওয়া যায়।
- CAPTCHA এন্ট্রি, ফেইক লাইক, পিটিসি, BET365 এগুলো ফ্রিল্যান্সিং।
- ফ্রিল্যান্সিং খুব সহজ, দিনে ২ ঘন্টা সময় দিলেই হাজার টাকা আয় করা যায়।
- ফ্রিল্যান্সিং মানে শুধু SEO।
- ফ্রিল্যান্সিং শুধু আইটি ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্য, বিজনেস, নন-আইটি বা ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্রছাত্রীদের জন্য নয়।
- ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে শুধুমাত্র আইটি ওরিয়েন্টেড ফিল্ডে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং প্রতারণা: সতর্ক থাকুন
বাংলাদেশে যে খাতই জনপ্রিয় হয়, সে খাতের নাম ব্যবহার করে কিছু প্রতারক প্রতারণা শুরু করে। বর্তমানে আউটসোর্সিং-ফ্রিল্যান্সিংয়ের নামে এমন প্রতারণা ব্যাপকভাবে চলছে। অনেক ট্রেনিং সেন্টার গুগল, ইউটিউব, এবং ইউডেমির কোর্স মুখস্থ, কপিপেস্ট করে সেটি শেখানোর জন্য ট্রেনিং খুলে বসেছে।
একটু চিন্তা করুন, আপনাকে সফল হওয়ার মেন্টরশিপ সেই দিতে পারবে, যে নিজে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হয়েছে। যে নিজেই কাজ করে না বা করেনি, যার মার্কেটপ্লেসে কোনো অস্তিত্ব নেই, যার ভালো পোর্টফোলিও নেই, সে কীভাবে আপনাকে প্রশিক্ষণ দেবে?
এসব ট্রেনিং সেন্টারের মালিক বা ট্রেইনারদের ব্যাকগ্রাউন্ড খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তারা নিজেরা অন্য ট্রেনিং সেন্টারে কোর্স করেছে, কিন্তু নিজে দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি বা সফল হতে পারেনি। এরপর তারা যা শিখেছে তা অন্যকে শেখানোর মাধ্যমে অনেক টাকা ইনকাম করতে শুরু করে দেয়। আর আমাদের দেশে অর্থলোভী মানুষের অভাব নেই, যারা সহজে আয় করার লোভে এইসব প্রতারণার ফাঁদে পা দেন।
ফ্রিল্যান্সিং প্রতারণার প্রকৃতি এবং প্রতিরোধের উপায়
এ ধরনের প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত:
- রিসার্চ করুন: যে ট্রেনিং সেন্টার বা ট্রেইনারকে বেছে নিচ্ছেন, তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করুন। তাদের পোর্টফোলিও এবং কাজের অভিজ্ঞতা যাচাই করুন।
- পর্যালোচনা পড়ুন: পূর্ববর্তী শিক্ষার্থীদের রিভিউ এবং ফিডব্যাক পড়ুন, সম্ভব হলে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলুন। এতে ট্রেনিং সেন্টার বা ট্রেইনারের প্রকৃত দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
- অভিজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করুন: যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল, তাদের সাথে কথা বলুন এবং তাদের পরামর্শ নিন।
- সতর্ক থাকুন: ফ্রিল্যান্সিং শেখার নামে অবৈধ কার্যক্রম যেমন CAPTCHA এন্ট্রি, ফেসবুক ফেইক লাইক, পিটিসি, ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন। এগুলো আসলে সাইবারক্রাইম এবং অবৈধ কার্যক্রম।
সঠিক পথে সফলতা
সঠিক প্রশিক্ষণ এবং দৃঢ় মনোবল নিয়ে কাজ করলে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়া সম্ভব। সঠিক পথে এগিয়ে গেলে এবং ভুল পথে পা না বাড়ালে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। তাই সবসময় সতর্ক থাকুন এবং সঠিকভাবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলুন।